প্রধানমন্ত্রী-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার একাউন্টে আড়াই হাজার কোটি টাকার ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ ঘটনা রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সভার আয়োজন করে মান্নান মুক্তি পরিষদ। সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় বিএনপির দাবি মানছে না দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই সরকার জানে বিএনপির দাবি মানলে তারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ তাদের কোনো জনপ্রিয়তা নেই। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। সে জন্য সব ধরনের স্থানীয় নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে। এ জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করছে। এটি ন্যায্য দাবি। কারণ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। সরকারের ‘অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে জনগণকে বোঝাতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান নজরুল ইসলাম। জনগণকে বোঝাতে হবে, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সে জন্য তারা জনগণের জন্য কোনো কাজ করবে না। তারা সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, আরো করবে। ব্যাংক ব্যবস্থা লুট হয়ে গেছে। সব জায়গায় একই অবস্থা। : নজরুল ইসলাম বলেন, এফবিআইয়ের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা) একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেখানে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি একাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এটি সন্দেহজনক লেনদেন। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুট হয়ে গেছে। সে দেশের একজন নাগরিকের বিদেশের কোনো একাউন্টে যদি আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো বড় এমাউন্টের সন্দেহজনক লেনদেন হয়, তাহলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়া, তদন্ত করা। জয় বাংলাদেশের নাগরিক। রাষ্ট্র আমাদের সকলের। তাই ব্যক্তি কে, সেটা রাষ্ট্রের দেখার বিষয় নয়। রাষ্ট্রের টাকা হলে সে টাকা অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে। আর যদি তদন্তে দেখা যায়, এটি রাষ্ট্রের টাকা না; তারই ন্যায্য, ট্যাক্স দেয়া ও উপার্জনের টাকা, তাহলে তো কোনো অসুবিধা নেই। : সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, এই সরকার কোনো অভিযোগই শুনতে রাজি নয়। বিশেষ করে কারো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা তো রীতিমত পাপও। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কখনো এটা হতে পারে না। তবে পাপ কখনো চাপা থাকে না। বের হওয়া শুরু হয়েছে, বের হচ্ছেও। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। : তিনি বলেন, দেশবাসী নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন চায়। কিন্তু দেশবাসীর এই দাবি মানলে আওয়ামী লীগের পে আর রাষ্ট্রীয় মতায় থাকা সম্ভব নয়। কারণ তাদের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা ভাল করেই জানে, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ছাড়া সংসদ, পৌর, সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না। সে জন্য তারা সব নির্বাচনে কারচুপি করছে। জনসমর্থন হারিয়ে কারচুপির মাধ্যমেই তারা এখন নির্বাচনে জিততে চাইছে। আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই দাবি করে নজরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধার এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। তবে সে জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগঠন দরকার। এ ল্েয দলটাকে শক্তিশালী করতে হবে। নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, এটিই স্বাভাবিক। তাছাড়া আমরা নিজেরা কেউ কারো শত্রু নই। দেশে এখন দুঃসময় চলছে। আমাদের মধ্যে এখন ঐক্য দরকার। দলটাকে শক্তিশালী করে আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। সেই লড়াইয়ে জিততে না পারলে শুধু মান্নান সাহেব না আমাদের সবাইকেই জেলে যেতে হবে, কেউ বাদ যাবে না। : প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু এই সরকার খেয়ে ফেলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন লুট করার জন্য সেখানকার নির্বাচিত মেয়রদের সরিয়ে দিচ্ছে। সে জন্য এম এ মান্নানসহ নির্বাচিত সব মেয়রদের কারাগারে ভরে রাখা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকুচিত করতে প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। গণমাধমের গলা টিপে ধরার জন্য তাই করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের শেষ স্তম্ভটুকুও ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। : আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কসম্পাদক আফজাল এইচ খান, সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র সহসভাপতি আবুল হোসেন, বিএনপি নেতা পীরজাদা রুহুল আমিন, আব্দুল মোতালেব, মেহেদী হাসান এলিস, গাজীপুর সদর থানা বিএনপি সাধারন সুরুজ আহমেদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আশরাফ হোসেন, আরিফ হাওলাদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা মনিরুল ইসলাম, নুরুল হুদা নুরু প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মেয়র মান্নান মুক্তি পরিষদের সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হাসান রাজু। : : :