বিদেশি ঋণে অব্যবস্থাপনার কারণে অর্থছাড় এবং অর্থ পরিশোধে দুটি ক্ষেত্রেই জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। ইআরডি থেকে নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ঋণ পরিশোধের কিস্তির তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে তিন মাস আগে পাঠানোর কথা থাকলেও তা করছে না ইআরডি। কখনও ঋণ পরিশোধের দিন, আবার কখনও কিস্তি পরিশোধ শেষ হওয়ার পর তথ্য দিচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি পরিশোধ করা যেমন সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে হঠাৎ করে বড় অঙ্কের কিস্তি পরিশোধের প্রস্তাব আসায় রিজার্ভ ও বিনিময় হারে ঝুঁকি তৈরি করছে। আবার উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ের তথ্যে বড় পার্থক্য পেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক তথ্যে গত দেড় বছরে ইআরডির সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের হিসাবের পার্থক্য প্রায় ৬১ কোটি ডলার বা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশি ঋণের ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে অর্থছাড় এবং অর্থ পরিশোধ নিয়ে যে ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য। ইআরডির কাছে ঋণের সব তথ্য থাকে। তারা ছয় মাস আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ঋণ পরিশোধ-সংক্রান্ত তথ্য দিতে পারে। কিন্তু ইআরডির ঋণ ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, গরমিলের কারণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে দেশ। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বৈঠক করে সমাধান করতে হবে।
এদিকে, বিদেশি ঋণের তথ্য সঠিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে না দেওয়ায় অর্থ পরিশোধে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য ইআরডিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে ইআরডি সচিবকে দেওয়া এ চিঠিতে বলা হয়েছে, ইআরডির কাছ থেকে হঠাৎ ‘ছাড় আদেশ’ পেলে বৈদেশিক মুদ্রায় তা পরিশোধে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। যথাসময়ে সরকারের বৈদেশিক ঋণ ও দেনা পরিশোধে ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রায় তারল্য সংরক্ষণ করা হয়। তবে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক তারল্য সংরক্ষণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে দায় পরিশোধ সম্ভব না হলে দেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। সঠিক সময়ে ইআরডি তথ্য দিলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিনিময় হারজনিত ঝুঁকিও কমে যাবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। বিদেশি ঋণের বিষয়ে ইআরডির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। ইআরডিকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিঠির বিষয়টি জানা নেই।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, ঋণের তথ্যে বড় ধরনের ভুলের বিষয়টি ইআরডির নজরে এসেছে। কাদের ভুলের কারণে এমন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো দূর করার জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পরও কেন সমস্যা, তা জানতে শিগগিরই বৈঠকে বসবে ইআরডি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮৭ কোটি ডলার বা ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা ছাড় করেছে সংস্থাটি। ইআরডির হিসাবে, গত অর্থবছরে অর্থছাড় হয়েছে ১২৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ১৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে অর্থছাড়ের পার্থক্য প্রায় তিন হাজার ২২৮ কোটি টাকা। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ইআরডির হিসাবের পার্থক্য প্রায় ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা এক হাজার ১৬২ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে অর্থছাড় হয়েছে ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। কিন্তু ইআরডির হিসাবে, ঋণ ও অনুদান মিলে অর্থছাড় হয়েছে মাত্র ৪৬ কোটি ডলার। বিষয়টি কয়েক দফা চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারেনি ইআরডি।
ইআরডি বিশ্বব্যাংক উইংয়ের সাবেক প্রধান আরাস্তু খান বলেন, বিদেশি ঋণ ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। গরমিলের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থ পরিশোধের তথ্য কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে পারলে কোনো সমস্যা থাকবে না।