মন্ত্রিসভার বৈঠকে ড. কামালের সমালোচনা

Slider বাংলার মুখোমুখি

file

সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান নেয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকারের সাবেক মন্ত্রী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। এই সংশোধনীর বিষয়ে উচ্চ আদালতের রিটে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ড. কামাল হোসেন বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা আবারো সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তার এ সমালোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আজ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ড. কামাল হোসেনের বর্তমান ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে।

ড. কামাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতম সহকর্মীদের একজন ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের আইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। একই সাথে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। পরে ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে গণফোরাম নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বর্তমানে তিনি এই দলের সভাপতি।

বৈঠকের ওই সূত্র জানায়, মন্ত্রীসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্দেশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টি সংসদের হাতে ছিল। এখন আবার একই বিষয় অন্তর্ভুক্ত হলো। এখন কামাল হোসেন সেটার বিরোধিতা করছেন কেন? জবাবে আনিসুল হক বলেন, উনি (ড. কামাল হোসেন) ওই সময়ে সংসদের কাছে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা রাখার যে যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, তার সবকিছু প্রমাণাদি আমার কাছে আছে। এখন কেন তিনি এমন কথা বলছেন জানি না। যদিও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন মন্তব্য করেননি বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত. ড. কামাল হোসেন ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৪ সালের চতুর্থ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৭ সালে সেটি আবারো সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলে; কিন্তু সে সময় সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৭৮ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা আবারও সংসদের এখতিয়ারে ন্যস্ত হয়। আগামী বৃহস্পতিবার এ সম্পর্কিত রিটের রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।

বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের এখতিয়ারে ন্যস্ত হওয়ার বিষয়ে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট বেশ কয়েকজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু)-এর কাছে এ বিষয়ে মতামত জানতে চান। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু সরকারের আইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেওয়ার বিরোধিতা করেন। ড. কামাল ছাড়াও আদালত অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে নিয়োগ দেন।

বিচারপতিদের অপসারণ নিয়ে দুই ধরনের মত দেখা যায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বক্তব্যেও। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন তিনি। এখন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ার পর খায়রুল হক সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা দেয়ার পক্ষে কথা বলছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা পেলেন মোজাম্মেল হক
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে পারছেন বলে শেখ হাসিনা তার প্রশংসা করেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা ডিসিপ্লিন অনুযায়ী কাজ করতে পারেননি। তবে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী সেটা ঠিকই পারছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক মন্ত্রী।

এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী মোজ্জাম্মেল হক বলেন, আমি সাধারণ মানুষের সাথে মিশে কাজ করি, মানুষের জন্য কাজ করতে পারলে ভালো লাগে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কাজের স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই ভালো লাগার বিষয়। তার প্রতি আমার অসীম কৃতজ্ঞতা।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *