খালেদার আমন্ত্রনকে সুলক্ষন বলছে আনন্দবাজার পত্রিকা

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ

ত-ম
গ্রাম বাংলা ডেস্ক:
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল পাঠানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কূটনৈতিকভাবে কুশলী এই আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় হতে পারে। বাংলাদেশে বিরোধী দল ক্ষমতাসীন নয় বলে তার নেতৃত্বকে উপেক্ষা করা ভ্রান্ত কূটনীতি।

বৃহসপতিবার পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বেগম জিয়ার উদ্যোগকে ‘সুলক্ষণ’ উল্লেখ করে এসব মন্তব্য করেছে। এখানে সম্পাদকীয়টি হুবহু তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিজেপি নেতৃত্বকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসমপন্ন প্রতিনিধি দল পাঠাইবার আমন্ত্রণ জানাইয়াছেন। আসন্ন দুর্গোৎসবের সময়কেই এই আমন্ত্রিত সফরের জন্য বাছিয়া লওয়া হইয়াছে। আপাতদৃষ্টিতে খালেদার এই আমন্ত্রণ আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত মনে হইতে পারে। কিন্তু ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁহার বাংলাদেশ সফরকালে বিরোধী নেত্রী খালেদার সহিত সাক্ষাৎ করেন। সম্ভবত তাহারই প্রতিদানস্বরূপ এই আমন্ত্রণ। দুর্গাপূজার লগ্নটিকে সফরের জন্য বাছিয়া দিবার কারণ, ইহা বাংলাদেশের হিন্দুদের বৃহত্তম উৎসব। বেগম জিয়া সম্ভবত বিজেপি নেতৃত্বকে দেখাইতে চাহেন, তাঁহাকে যতটা ভারত-বিরোধী বলিয়া গণ্য ও প্রচার করা হয়, তিনি তাহা নহেন। ভারতের সহিত সুসমপর্কের মূলে দুই দেশের রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের মধ্যে পারসপরিক বিনিময়ও ফলপ্রসূ হইতে পারে বলিয়া তাঁহার ধারণা। বেগম জিয়ার এই আমন্ত্রণ কূটনৈতিক ভাবে কুশলী চাল হইলেও দ্বিপাক্ষিক সুসমপর্কের বুনিয়াদ সুদৃঢ় করিতে ইহা সহায়ক হইতে পারে।
সাধারণত দেখা যায়, ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী ও সচিবরা বাংলাদেশ সফরে গেলে সেখানকার শাসক দলের সঙ্গেই যাবতীয় আলাপ-আলোচনা চালান। বাংলাদেশের রাজনীতি কিন্তু কার্যত দ্বিদলীয়। শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ এবং খালেদা জিয়ার বিএনপি-র মধ্যেই ক্ষমতার মেরু ঘোরাফেরা করিয়া থাকে। তাই বিরোধী দল ক্ষমতাসীন নয় বলিয়া তাহার নেতৃত্বকে উপেক্ষা করা ভ্রান্ত কূটনীতি। বেগম জিয়ার শাসনকালও অবশ্য এ জন্য কতকাংশে দায়ী। ভারতের সহিত সুসমপর্ক রচনায় অতীতে যে তাঁহার প্রচেষ্টার অভাব থাকিয়াছে, তাহাতে সংশয় নাই। রাজধানী ঢাকাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করিয়া এবং ওই জঙ্গিদের ‘স্বাধীনতা-সংগ্রামী’ আখ্যা দিয়া প্রধানমন্ত্রী খালেদার সরকার স্বভাবতই নয়া দিল্লির বিরাগভাজন হয়। তুলনায় শেখ হাসিনা ওয়াজেদের আওয়ামি লিগ সরকার অনেক বেশি ভারতবন্ধুর ভূমিকা পালন করিয়াছে। কিন্তু ভারত জানে, যেমন জানেন বেগম জিয়াও যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতাসীন হইতে পারে এবং সেই দল ও তাহার সর্বময় কর্ত্রীর সহিত সুসমপর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। একই কারণে খালেদাও বিজেপির সহিত সুসমপর্ক গড়িতে চাহেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তাঁহার নির্বাচনী প্রচারের সময় দুইটি বিষয় উল্লেখ করিয়াছিলেন। এক বাংলাদেশ হইতে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে স্থান নাই, যদিও শরণার্থীরা স্বাগত। দুই, শরণার্থী তাহারাই, যাহারা দুর্গা-মাইয়ের পূজা করে, অর্থাৎ বাংলাদেশ হইতে বিতাড়িত হিন্দুরা। বাংলাদেশি হিন্দুদের সেই সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা-মাইয়ের পূজার সময়েই খালেদা বিজেপির প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানাইয়াছেন। সেই সঙ্গে জানাইতে ভুলেন নাই যে, তাঁহার প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা অনেক হ্রাস পায় এবং ফলত ভারতে তাহাদের শরণার্থী হওয়ার ঘটনাও কমিয়া আসে। বেগম জিয়া যে বিজেপির নরেন্দ্র মোদীকে আশ্বস্ত করিতে চাহেন, তাহা সপষ্ট। তিনি ভবিষ্যতের নিরিখে বৃহত্তম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত মৈত্রীর সেতুবন্ধনে আগ্রহী। সুলক্ষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *