কঠোর নিরাপত্তায় ভোট করানোর জন্য আমজনতা যখন নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। গত রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার ভবানীচকের নির্বাচনী সভায় মমতা বলেছেন, কলকাতায় যেভাবে সেন্ট্রাল পুলিশ নিয়ে এসে ভোট করানো হল, সেটা এক কথায় চ্যাংড়ামো। যা যা হয়েছে সব কিছুর উত্তর আমি বুঝে নেব।
রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, যারা করছে, তাদের রেকর্ড আমার কাছে আছে। আমি যদি বেঁচে থাকি, প্রত্যেকটার উত্তর দিয়ে দেব। শেষ দফা ভোটের প্রচারে রাজ্যের কিছু পুলিশকর্তাকে হুমকি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সারা জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে দিল। যারা করল, আগামী দিনে তাদের ভুগতে হবে। ১৫ দিনের জন্য দায়িত্ব পেয়ে কেউ যদি ভাবে আমার মাথায় (পুলিশের মাথায়) স্বর্ণমুকুট পরিয়ে দেবে, তা হলে সেটা ভুল।
এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাত দুষ্টতার অভিযোগে বহু পুলিশ কর্তাকে অপসারন করেছে তাদের পদ থকে। বদলি করেছে জেলাশাসক থেকে থানার ওসিদেরও। আর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীবকুমারকে সরিয়ে সৌমেন মিত্রকে নিযোগ। যদিও শুরুতে মমতা বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন পুলিশ অফিসারদের বদলি করলে কিছু যায় আসে না, কারণ সব অফিসার তারই।
কিন্তু পুলিশ যেভাবে মেরুদ- সোজা রেখে ভোটের দিন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে তাতে ক্ষিপ্ত মমতা পুলিশ বাহিনীকে ফল ভুগতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন । যে পুলিশকে একদিন আমারই লোক বলে দাপট দেখিয়েছিলেন সেই পুলিশের বিরুদ্ধেই মমতার অভিযোগ, সিপিএম-কংগ্রেস থানায় গিয়ে যা বলছে, পুলিশ তাই শুনছে। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি থানা কন্ট্রোল করছে। সেই সঙ্গে মমতা শেষ দফার নির্বাচনী প্রচারে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট লুঠের তত্ত্ব হাজির করেছেন। মমতার অভিযোগ, রাজ্যে ‘নির্বাচনের নামে নির্যাতন’ হচ্ছে। তাঁর মতে, সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি গাঁটছড়া বেঁধেছে। তাদের সাহায্য করতে কাজে লাগানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। দিল্লির কিছু দালাল পুলিশ এখানকার কিছু ভিতু পুলিশকে নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।
অনেক নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু এমনটা দেখিনি। পুলিশের কঠোর ভূমিকায় মমতা কেন এতটা ক্ষিপ্ত সে সম্পর্কে বিরোধীদের অভিমত, পুলিশ পুলিশের কাজ করায় এ বারের ভোটে ভূতের নৃত্য দেখা যায়নি। শাসকের ভোট-মেশিনারি কাজ করেনি। সেটাই কাঁপুনি ধরিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। মমতা পরাজয়ের আশঙ্কা করছেন বলেই তাঁর রাগ-হতাশা এ ভাবে বেরিয়ে পড়ছে। কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র বলেছেন, রাজ্য পুলিশের ভূমিকা দেখে মমতা ভয় পেয়েছেন। তাই শেষ দফা ভোটের আগে পুলিশকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।