মাতৃভূমিকে অনিরাপদ করতে আমরা অনেকেই দায়ী!

জাতীয় টপ নিউজ বাধ ভাঙ্গা মত রাজনীতি সম্পাদকীয়

IMG_20151014_144721

 

 

দোষ শুধু সরকার ও বিরোধী দলেরই নয়। মাতৃভূমিকে অনিরাপদ করতে আমরা অনেকেই দায়ী। কারণ যার যার অবস্থান থেকে আমরা অনেকটাই সরে গেছি। এই জন্য দায়ী আমরাও।

ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার সব কিছু বিসর্জন দিচ্ছে। আর এ জন্যই দেশটা এখন অনিরাপদ। সংসদের বিরোধী দল নিজেরা জীবিত থাকতে সরকারের সঙ্গে যোগশাযশ করে বিরোধী দলের ভূমিকা না রেখে সরকারের দেয়া মন্ত্রীত্ব গ্রহন করে জনগনের কথা না বলে সরকারকে সতর্ক না করে দেশকে অনিরাপদ করছেন।

সাবেক সরকারী দল বিএনপি ক্ষমতায় আসার জন্য সরকারকে বিব্রত করতে দেশ ও জনগনের বিরোধীতা করছেন। নিজেদের স্বার্থে জনগনকে ব্যবহার করতে বার বার ফেল মারছেন। কারণ জনগন এখন ডিজিটাল। সব বুঝেন। দলীয় স্বার্থে কর্মসূচি দিয়ে দেশের জন্য চালাতে চায়। দেশের প্রয়োজনে বিএনপি কোন কর্মসূচি দেয় না। বেগম জিয়ার মামলার তারিখ আসলেই বিএনপি হরতাল দেয়। তেল গ্যাসের দাম বার বার বাড়লেও হরতাল দেয় না। নিজেদের আঁখের গোচাতে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে অথচ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির কি অবস্থা হবে তা জেনেও তারা নির্বাচন করছে। আওয়ামীলীগ, বিএনপিকে ঠেকাতে গিয়ে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে দেশের মানুষ মারছে। আর বিএনপি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। সুতরাং দেশের বর্তমান অনিরাপদ অবস্থার জন্য বিএনপিও দায়ী। এ ছাড়া তারা ক্ষমতার প্রয়োজেন যুদ্ধাপরাধী ও স্বৈরশারাচারকে ক্ষমতার ভাগও দিচ্ছেন।

এদিকে জামাতে ইসলামী ও বাম দলগুলো প্রধান রাজনৈতিক দলের মারামারির মধ্যে নিজেদের অবস্থান তৈরীর চেষ্টা করছেন। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রয়োজনে দেশের ১২টা বাজাতে চাচ্ছেন। বড় বড় রাজনৈতিক দল গুলো পেশাশক্তি প্রদর্শন করার জন্য অপরাধীদেরও দলে স্থান দিচ্ছেন। যার নামে যত বেশী মামলা আছে তাকেই জনপ্রিয় মনে করে মূল্যায়ন করছেন। এতে ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক কর্মীকে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবীরা কোন না কোন ছোঁতা দেখিয়ে আন্দোলন শুরু করছেন। সরকারও ওই সকল দাবি পূরনের দিকে নজর না দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাচ্ছেন। ফলে পেশাজীবীরা এখন অনেকটাই রাস্তায় আছেন। পেশাজীবীদের রাজনীতিকরণের কারণে সামাজিক আন্দোলনগুলো মুখথুবরে যাচ্ছে। কোন ঘটনার ন্যায় বিচারের জন্য সামাজিক আন্দোলন শুরু হলে কিছু দিন পর  রাজনৈতিক রঙ মাখিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা যারা সামাজিক আন্দোলন করি তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। ফলে আমাদের ন্যায্য আন্দোলন অন্যায্য হয়ে যায়।

দেশের চতুর্থ স্তম্ব বলে খ্যাত গণমাধ্যম আজ প্রায় অসহায়। গণমাধ্যমের মালিকানা অনেকটাই সরকারের নিয়ন্ত্রনে। মালিকানা সরকারী নিয়ন্ত্রনে থাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই পেশাদারিত্ব ছেড়ে স্বার্থের জন্য ছুটছেন। সত্য সংবাদ প্রকাশ করা যেহেতু সমস্যা তাই সত্যকে পাশ কাটিয়ে চলছেন সাংবাদিকেরাও। ফলে অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। সাংবাদিকতায় দলীয় করণ হওয়ার কারণে মেধাবী সাংবাদিকেরা আজ অসহায়। তারা নিজ নিজ স্থানে বাধ্য হয়ে চুপটি মেরে বসে আছেন।

মনে পড়ে যায়, ২০০৭ সালে একটি অসাংবিধানিক সরকার আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে দেশের অনেক মহল মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। রাজনীতিবিদদের সাংঘর্ষিক অবস্থা সমাধান করার উদ্যোগ না নিয়ে তারা নিজেরাও অতি উৎসাহী হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে চলে আসে একটি অসাংবিধানিক সরকার। যে সরকার আমাদের গনতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কাল অধ্যায়।

পরিস্থিতি বলছে, সরকার ও রাজনীতিকেরা কখন কি বলেন তারা নিজেরাও মনে করতে পারেন না। গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হলে অস্বীকারও করেন। এর কারণ, তারা যখন কথা বলেন তখন আবেগ প্রবন হয়ে যান। এটা মোটেও কাম্য নয়। এই ধরণের অতি উৎসাহী কথা বিপদ ডেকে আনে। আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা রাজনীতিকের মত কথা বলছেন। গনতান্ত্রিক সরকার জনগণ নির্ভর না হওয়ায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যা স্বাভাবিক। রাজনৈতিক সমঝোতায় সকল দলের অংশ গ্রহনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সরকারী কর্মচারীরা এমন বেপরোয়া হতেন না। 

সম্প্রতি দেশের উত্তপ্ত অবস্থায় নারিকদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। সরকার বলছে নাগরিকেরা নিজেরাই যেন নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেন। এর অর্থ হল জনগন রাষ্ট্রের মালিক বলে সরকার মনেই করছেন না। এর কারণও আছে। যেহেতু জনগনের ভোট এখন আর মূখ্য বিষয় নয়। ক্ষমতাই মূখ্য বিষয়। সেই ক্ষমতা জনগন থেকে না আসলেও চলে।

দেশের এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ আমাদের টার্গেট করে কথা বার্তা বলছে। নিজের দেশের খবর নেই অথচ বাংলাদেশ নিয়ে তারা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।  এতে মনে হয় তারাও কোন না কোন সূযোগ খুঁজছেন। আর এই সূযোগটা কাজে লাগাচ্ছে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠি। ফলে আমাদের দেশ এখন অশান্ত ও অনিরাপদ হয়ে গেছে।

পত্রিকায় খবর এসেছে, যশোরের ৩০টি সংখ্যালঘু পরিবার নিরাপত্তার অভাবে ভারতে চলে গেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জা জনক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে ও পরে পরাজিত ও বিজয়ী প্রার্থীরা প্রতিপক্ষের উপর আক্রমন করছেন। যা এখনো অব্যাহত আছে। ভোটের নামে ছেলে খেলা করে ভোটার খুন হচ্ছে আর বাকী ভোটাররা নিরাপত্তা আতঙ্কে আছেন। এটা কোন সভ্য দেশে কাম্য হতে পারে না।

তাই এখনো সময় আছে, যার যার অবস্থান থেকে সরে গিয়ে জাতীয় ভাবে সমঝোতা করার। না হয় দেশে একটি অজানা গন্তব্যে চলে যাবে এটা এখন অনেকেই বলছেন।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *