নিউ ইয়র্কের প্রাইমারি নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন ডেমোক্রেট দলের হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। নিউ ইয়র্কে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় দল দুটির প্রাইমারি নির্বাচন। এতে হিলারি ক্লিনটন শতকরা প্রায় ৫৮ ভাগ ভোট পেয়েছেন। তার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স পেয়েছেন বাকি ভোট।
এতে ২৩৭টি ডেলিগেটের মধ্যে হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন ১৩৫টি। বার্নি স্যান্ডার্স পেয়েছেন ১০৪টি ডেলিগেট। ডেলিগেট ও সুপার ডেলিগেট মিলিয়ে হিলারি ক্লিনটনের সংগ্রহ এখন ১৯১১ টি ডেলিগেট। বার্নি স্যান্ডার্সের সংগ্রহ ১২২৯টি ডেলিগেট। ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন পেতে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৩৮৩টি ডেলিগেট পেতে হবে। সে হিসেবে হিলারি ক্লিনটনকে আর মাত্র ৪৭২টি ডেলিগেট পেতে হবে। এখনও কয়েকটি বড় রাজ্যে ডেমোক্রেটদের প্রাইমারি অথবা ককাস নির্বাচন বাকি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেরিল্যান্ড (মোট ডেলিগেট ১১৮টি), পেনসিলভ্যানিয়া (মোট ডেলিগেট ২১০টি), ক্যালিফোর্নিয়া (মোট ডেলিগেট ৫৪৬টি), নিউ জার্সি (মোট ডেলিগেট ১৪২টি)। এগুলোর মাঝ থেকে কাঙ্খিত সংখ্যক ডেলিগেট সংগ্রহে হিলারি সক্ষম হবেন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওদিকে গতকালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রাইমারিতে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ভোট পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি অর্জন করেছেন রাজ্যে মোট ৯৫টি ডেলিগেটের মধ্যে ৮৯টি। তার দলীয় মনোনয়ন পেতে মোট ডেলিগেট লাগবে ১২৩৭টি।
এখন পর্যন্ত তিনি মোট ৮৪৫টি ডেলিগেট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তাকে আরও কমপক্ষে ৩৯২টি ডেলিগেট পেতে হবে। অন্যদিকে নিউ ইয়র্কে তার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ ও জন কাসিচ তার ধারেকাছেও ঘেষতে পারেন নি। তারা দু’জনে মিলে যে ভোট পেয়েছেন তার চেয়ে একা বেশি ভোট পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে হিলারি ও তিনি মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত করার কাছাকাছি বলে বলা হয়েছে অনলাইন বিবিসির এক প্রতিবেদনে। নিউ ইয়র্কে বিজয় পাওয়ার পর হিলারি ক্লিনটন বেশ উৎফুল্ল। তিনি নিউ ইয়র্কে দলের নির্বাচনী সদর দপ্তরে দেয়া বক্তব্যে সেই উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেন নি। বক্তব্য দিতে গিয়ে তার মুখে যেন হাসির ফল্গুধারা ঝরে পড়ছিল। তিনি মঞ্চে উঠেই ধন্যবাদ জানালেন নিউ ইয়র্কবাসীকে। বললেন, থ্যাংক ইউ নিউ ইয়র্ক।
নিউ ইয়র্কাররা সব সময়ই আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমিও সব সময় তাদের হিলারি হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা একতাবদ্ধ আছি সেটা আবার দেখিয়ে দিলাম। আমি গভীর, গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। অন্যদিকে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিউ ইয়র্কে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, নিউ ইয়র্কের মানুষ আমাকে ভালভাবে চেনেন। যখন তারা আমাকে এভাবে ভোট দেন তখন তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। আমাকে নিয়ে যে অকল্পিত প্রজেকশন ছিল এতদিন তার চেয়ে আমি বেশি ডেলিগেট অর্জন করেছি। তবে যদি তিনি শতকরা ৬০ ভাগের বেশি ভোট পান তাহলে নিউ ইয়র্কের ৯৫টি ডেলিগেটের সবগুলোই তিনি পাবেন। গত কয়েকদিন ধরে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান শিবিরের প্রার্থীরা নিউ ইয়র্কে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন। তার মধ্যে হিলারি ক্লিনটন হলেন নিউ ইয়র্কের সিনেটর। এ রাজ্যে তার রয়েছে ব্যক্তিগত ইমেজ। অন্যদিকে এ রাজ্যে বেশ শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার নিজেদের যোগ্যতা নিয়ে এ রাজ্যে নেতিবাচক প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু নির্বাচনের সবশেষ ফলে হিলারি বলেছেন, কেউ আমাদেরকে বিভক্ত করতে পারবে না। উল্লেখ্য, গতকালই নিউ ইয়র্কের ভোটে নিজেদের ভোট দিয়েছেন হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে এবারের প্রাইমারি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী সব প্রার্থীর নিজের ভোট দেয়া সম্পন্ন হলো। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ দিন সকালে ম্যানহাটানে সেন্ট্রাল সিনাগগে নিজের ভোট দেন। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে সঙ্গে নিয়ে চাপ্পাকুতে নিজের বাড়ির কাছে ভোট দেন হিলারি ক্লিনটন। এর আগে মার্চে ভারমন্টে নিজের ভোট দিয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্স। ওই সময়ে রিপাবলিকান টেড ক্রজ ও জন কাসিচ যথাক্রমে টেক্সাস ও ওহাইওতে নিজেদের ভোট দেন।