ভারত ও মিয়ানমারের পর এবার বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে বাংলাদেশের একটি অংশ দাবি করেছে শ্রীলঙ্কা। কলম্বো বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে নালিশ করেছে। বরাবরের মতো লঙ্কানদের এ দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। দেশটির এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণ-বিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য মিলেছে। সূত্র মতে, নিজ সীমানা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানের অধিকার নির্ধারণের জন্য শ্রীলঙ্কা সমপ্রতি যে দাবি করেছে তাতে বাংলাদেশের কিছু অংশ দাবি করা হয়েছে। তাদের দাবিতে ভারতের অংশও পড়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, কলম্বোর দাবির বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কমিশনে আপত্তিপত্র জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, সেখানে শ্রীলঙ্কার দাবি যে জাতিসংঘ সমুদ্র আইন ১৯৮২’র ৭৬(৫) ধারার পরিপন্থি তা স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা মহীসোপানের যে অংশ দাবি করেছে তা তাদের সীমানা থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইলের বেশি। এটি ২৫০০ মিটার গভীর সমুদ্র থেকে ১০০ নটিক্যাল মাইলেরও বেশি। দেশটির ওই দাবি আইনের পরিপস্থি বলে বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে জানিয়ে ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর মহীসোপানে দুই প্রতিবেশীর দাবির বিরুদ্ধে আইনি এবং যৌক্তিকভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ প্রতিবাদপত্র দিয়েছে।
আগামী দিনে দেশটি যাতে নতুন করে কোনো আইনি ঝামেলায় বাংলাদেশকে জড়াতে না পারে সেটি নিশ্ছিদ্র করতে তারা এখনও সবচেয়ে বেশি মনোযোগী বলে জানান ওই কর্মকর্তা। কোনো রাষ্ট্র নিজ সীমানা থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল বা ২৫০০ মিটার গভীর সমুদ্র থেকে ১০০ নটিক্যাল মাইলের বেশি মহীসোপান দাবি করতে পারে না। আইনে তা স্পষ্ট বারণ আছে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে শ্রীলঙ্কা প্রায় ১০০০ নটিক্যাল মাইল মহীসোপান দাবি করেছে। যেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের মহীসোপানের অংশ পড়েছে। শ্রীলঙ্কার তরফে জাতিসংঘে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু ভারতের মহীসোপানও দাবি করছে শ্রীলঙ্কা তাই দিল্লির সঙ্গে কলম্বোর কি আলোচনা হয় বা আদৌ এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয় কি-না তা দেখার অপেক্ষায় ছিল ঢাকা। বাংলাদেশ এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানা গেছে।
মিয়ানমারের দাবি বাতিলে জাতিসংঘকে অনুরোধ: এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি সত্ত্বেও মহীসোপানের দাবি নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশটির যে অবস্থান তার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘের মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণ-বিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস) দেয়া সংশোধিত দাবিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের অংশ দাবি করে। মিয়ানমারের এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্রও দেয়া হয়। পরে মিয়ানমারের দাবি বাতিলের জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি এখন জাতিসংঘের বিবেচনাধীন রয়েছে জানানো হয়েছে।