পহেলা বৈশাখ ঘিরে নিরাপত্তা ক্র্যাকডাউন। বিকাল ৫টার মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে সকল অনুষ্ঠান শেষ করতে বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। ভুভুজেলা বাঁশি নিষিদ্ধ করায় অনেকে খুশি হলেও মুখোশ ব্যবহারে নিষেধ করার সমালোচনা চলছে। পরে অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে মুখোশ মুখে নয় হাতে রাখতে বলা হয়েছে। বিধিনিষেধের কারণে এবার কনসার্ট আয়োজন বাতিল করেছে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড এসোসিয়েশন- বামবা। পয়লা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বন্ধের দাবি জানিয়েছে ওলামা লীগ।
সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, পয়লা বৈশাখ উদযাপনে বিধিনিষেধ মধ্যযুগীয় চিন্তা। সরকার মানুষের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিতে সাংবিধানিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। অথচ প্রশাসন ঘোষণা করল পয়লা বৈশাখে বিকাল পাঁচটার পরে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। এ সিদ্ধান্ত মধ্যযুগীয় চিন্তার প্রতিফলন এবং সংবিধানকে তাচ্ছিল্য করার প্রয়াস। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি তুলেছেন তারা। গতকাল সরেজমনি রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা গেছে, বিধিনিষেধের বেড়াজালের মধ্যেও নতুন বছরকে বরণ করতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দম ফেলার ফুসরত নেই আয়োজকদের। শিল্পীরা তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলছেন মাটির সরা, দেয়াল, মুখোশ, ব্যানার। বর্ষবরণে এখন সাজসাজ রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। চারুকলা ইনস্টিটিউটে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। নতুন বছরকে বরণ করতে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রমনা পার্কে ছায়ানটের বর্ষবরণের মঞ্চ তৈরি করছে কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ লোকজ স্ট্রাকচার, পুতুল, মুখোশ, মাটির জিনিস বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করছে, কেউ নিজেদের তৈরি এসব জিনিস বিক্রি করছেন, কেউ বা আবার বিদেশি পর্যটকদের তথ্য দিচ্ছেন, কেউ আবার বাইরে থেকে দেখতে আসা অতিথিদের সময় দিচ্ছেন। মনকে উদার ও মুক্ত করার আহ্বানে এবারের শোভাযাত্রার স্লোগান ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে… ’।
মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কেমন চলছে, সেটা একনজর দেখতে এসেছিলেন দর্শনার্থীরা। চারুকলার বাইরেও ছিল উৎসবের আমেজ। ঘুরতে এসে চারুকলা শিক্ষার্থীদের তৈরি লোকজ সংস্কৃতির জিনিস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। চারুকলার দেয়ালে দেয়ালে রঙের তুলিতে আঁকা হয়েছে আলপনা। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্ররা জানান, ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরাই সর্বপ্রথম পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সেই থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালির বর্ষবরণে এনেছে নতুন মাত্রা। সকল গ্লানি আর পাওয়া না পাওয়ার হিসেব চুকিয়ে বর্ষবরণের সকালে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন এই শোভাযাত্রায়। এবারের শোভাযাত্রার দায়িত্বে আছেন চারুকলা অনুষদের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রার দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এবারের বর্ষবরণ নিয়ে আলাদাভাবে বেশ কিছু স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়েছে। যেমন মা ও শিশু, মহিষ, নৌকা, হাতি প্রভৃতির ফ্রেম। তিনি বলেন, বৈশাখে তিনদিন ধরে চারুকলায় অনুষ্ঠান হবে। আগের দিন চৈত্রসংক্রান্তি, বৈশাখের দিন মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পরের দিন যাত্রাপালা। এবারের শোভাযাত্রায় মুখোশ ও ভুভুজেলার ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরেক শিক্ষার্থী আনিকা তাসনিম বলেন, আমি অনেক খুশি যে ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কানের কাছে বাঁশি বাজিয়ে ছেলেরা মেয়েদের টিজ করে থাকে। এখন সেই সুযোগটা থাকবে না। তা ছাড়া ভুভুজেলা আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ নয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
এদিকে পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নেয়া হয়েছে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ। পুরো ক্যাম্পাসকে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের একটি অংশেই যেন লোক সমাগম বেশি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দেয়া স্টলগুলো হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের মাঠ ও মল চত্বরে ছড়িয়ে দিয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, লোক সমাগম এক স্থানে বেশি হলে সেখানে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা এবার শিক্ষার্থীদের দেয়া কিছু স্টল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন খোলা জায়গায় স্থানান্তর করেছি। এ ছাড়া বাইরের কোনো কোম্পানিকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয় নি। তিনি বলেন, উৎসবগুলোতে টিএসসিকেন্দ্রিক সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। তাই টিএসসি ও চারুকলার পাশের সোহরাওয়াদী উদ্যানের গেট বন্ধ করে রাখার জন্য পুলিশকে আমরা অনুরোধ করেছি। বাংলা একাডেমির অংশের গেট খোলা রাখা হবে। ক্যাম্পাসে প্রায় ৪০০ বিএনসিসি ক্যাডেট, রোভার স্কাউট পোশাকে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। বিকাল ৫টার পর ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বিকাল ৫ টার পর বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সকাল থেকে তারা নির্বিঘ্নে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করবে। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখের দিন যাতে আপত্তিকর কিছু না ঘটে সেজন্য ক্যাম্পাসে মাইকের ব্যবস্থা করা হবে। প্রক্টর অফিস থেকে এসব মাইকে কিছু টিএন্ডটি নাম্বার ঘোষণা করা হবে। কেউ কোথাও সমস্যায় পড়লে যাতে দ্রুত এসব নাম্বারে জানিয়ে দিতে পারে। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আরও বলেন, মঙ্গলশোভা যাত্রায় আগতদের যাতে পানির কষ্ট না হয় সেজন্য ৭/৮টি স্থানে পানির বড়ো জার বসানো হবে। তা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থান যেমন, টিএসসির পায়রা চত্বর, টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট, চারুকলার পাশের গেট, মল চত্বর, ভিসি চত্বর এলাকাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এ বছর ছাত্রলীগ মল চত্বরে বৈশাখী কনসার্টের আয়োজন করেছে। চারুকলা অনুষদের ভেতরে শতবর্ষের পুতুল নাচ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
গতকাল সরেজমিন রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ডিএমপির পক্ষ থেকে ১৯টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে পুলিশের ৩টি কন্ট্রোলরুম। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় ১৫০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে ওইসব বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রমনা পার্কে গিয়ে দেখা যায়, রমনার বটমূলে মঞ্চের সাজসজ্জা চলছে। পাশেই খোলা হয়েছে পুলিশ ও র্যাবের পৃথক দুটি কন্ট্রোলরুম। মঞ্চের পাশেই একটি ওয়াচ টাওয়ার।
কন্ট্রোলরুমের আশপাশের এলাকায় এবার বিপুল সংখ্যক মাইক লাগানো হচ্ছে। ওই মাইকের মাধ্যকে কন্ট্রোলরুম থেকে পার্কের মধ্যে আসা দর্শনার্থীদের পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। এ ছাড়াও পার্কের মধ্যে বিভিন্ন গাছে লাগানো হয়েছে কন্ট্রোলরুমের নম্বর। যেন দর্শনার্থীরা তাদের সমস্যা দ্রুত পুলিশকে জানাতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রমনা পার্কে প্রবেশের জন্য সাতটি গেট রয়েছে। ওই গেটগুলো এখন খোলা আছে। তবে বুধবার রাত ৯টার পর থেকে সকল গেট বন্ধ করে দিবে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিশু পার্ক, রমনার বটমূল ও মৎস্য ভবনের গেট দিয়ে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। এ সময় প্রত্যেক গেটে থাকবে আর্চওয়ে। দেহ তল্লাশি করে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। আর বাকি চারটি গেট দিয়ে দর্শনার্থীরা পার্ক থেকে বের হতে পারবেন। তবে প্রবেশ করতে পারবেন না। পোশাকে ও সাদা পোশাকে ভাগ করে পুলিশের সদস্যরা ওই পার্কের মধ্যে টহল দিবেন। নারী পুলিশের সদস্যরাও পার্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন করবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, টিএসসির গেটে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোলরুম তৈরি হয়েছে। ওই কন্ট্রোলরুম থেকে পুলিশ ওই উদ্যানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। উদ্যানের মধ্যে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে রমনার মতো মাইক। তল্লাশি করে ওই উদ্যানে ঢুকতে দেয়া হবে।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, এবারই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে। উদযাপন কমিটি ও পুলিশ একত্রে বসে প্রায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তগুলো ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনার সোমবারের তার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন। পুলিশের নিরাপত্তার কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা অংশ নিবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। বিকাল ৫টার পর সকল অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে। বৈঠক শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এবারের পহেলা বৈশাখ যেন উৎসবমুখর পরিবেশে নগরবাসী পালন করতে পারে এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা এই নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জনগণকে শৃঙ্খলিত করতে চাই না। নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত না হয় এজন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
নিরাপত্তায় থাকছে র্যাবের হেলিকপ্টার
পয়লা বৈশাখের নিরাপত্তায় ঢাকার আকাশে উড়বে র্যাবের হেলিকপ্টার। রাজধানীর রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইউনিফর্মধারী র্যাব সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, ডগ স্কোয়াড, মেডিকেল টিম, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, চেকপোস্ট, অবজারভেশন পোস্টসহ নানারকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান- র্যাব। র্যাবের হেলিকপ্টার আকাশে টহল দেয়ার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। এ ছাড়া রমনা-সোহরাওয়ার্দীতে করা হবে সিসিটিভি মনিটরিং। গতকাল বিকালে রমনা বটমূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারক করতে গিয়ে এসব তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এ সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বৈশাখী উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে র্যাবের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আমরা গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছি। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে দুটি ভাগে ভাগ করে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি। এখানে একাধিক অবজারভেশন পোস্ট, চেকপোস্ট, ভেহিক্যাল পেট্রল, মোটরসাইকেল পেট্রল থাকছে। এ ছাড়া পোশাকে এবং সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। এই ব্যবস্থা রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুধু নয়, ঢাকা শহরে আমাদের জানা মতে ৭০টি স্পটে অনুষ্ঠান হবে, সব জায়গাতেই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আমরা রমনা পার্কে সিসিটিভি স্থাপন করেছি, রবীন্দ্র সরোবরেও আমরা সিসিটিভি স্থাপন করেছি। রমনা বটমূলে আগামীকাল (আজ) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড দিয়ে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হবে। র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, আকাশে আমাদের হেলিকপ্টার পেট্রল করবে। বোম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড স্ট্যান্ডবাই থাকবে। বৈশাখ উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে পানি, ক্যাপ ও হাতপাখা বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। র্যাব মহাপরিচালক বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। এ ছাড়া লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টারও স্থাপন করা হয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে রমনা পার্কে বড় একটি এলইডি স্থাপন করা হবে যাতে রমনা বটমূলের প্রোগ্রাম দূরে বসেও লোকজন দেখতে পারে।
‘এই সিদ্ধান্ত মধ্যযুগীয়’
এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে পয়লা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে নারী নিরাপত্তা জোটের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিকাল ৫টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার সিদ্ধান্তকে মধ্যযুগীয় চিন্তার প্রতিফলন এবং সংবিধানকে তাচ্ছিল্য করার প্রয়াস বলে মন্তব্য করা হয়। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে নারী-পুরুষের চলাচলের উপযোগী করা, নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, সরকার নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ। কারণ তারা ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, সামপ্রদায়িক শক্তিকে সামনে রেখে তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাইছে না। পক্ষান্তরে যারা মুক্তবুদ্ধির মানুষ, তাদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়ে দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। নারীদের নিরাপত্তার জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না মন্তব্য করে সুলতানা কামাল বলেন, নারীদের অনবরত বলা হচ্ছে যে তোমার নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব তোমারই। নিরাপদ থাকতে হলে তোমাকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে। তোমার পোশাকে নারীর সত্তা যেন কোনোভাবেই প্রকাশিত না হয়, কোনোভাবেই যেন নারীত্ব বিকশিত না হতে পারে। তিনি বলেন, সময় বেঁধে রাষ্ট্র পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিল, কোনো কারণে উৎসবের আমেজ, অনুষ্ঠান যদি পাঁচটার মধ্যে শেষ না হয় তাহলে রাষ্ট্র তোমার সুরক্ষার দায়িত্ব নেবে না। কিছু দুর্বৃত্তের ভয় দেখানোর কারণে সবার অধিকার ক্ষুণ্ন করা হলো। ভয়ের সংস্কৃতিকে সমর্থন দেয়া হলো।