১০০ বছরে প্রথম বেড়েছে বাঘের সংখ্যা

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

 

9604_b2

 

 

 

 

 

 

 

 

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অরণ্যে বাঘের সংখ্যা তিন হাজার ৮শ’ ৯০।  ২০১০ সালের হিসাবে প্রাপ্ত বাঘের সংখ্যার তুলনায় প্রায় সাত শ’ বেশি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারের গণনায় এই হিসাব উঠে এসেছে। এতে করে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে দুই জরিপের ব্যবধানে প্রথমবারের মতো বেড়েছে গণনাকৃত বন্য বাঘের সংখ্যা। তা সত্ত্বেও বাঘ সংরক্ষণের জন্য আরও বেশি সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড ও গ্লোবাল টাইগার্স ফোরাম যৌথভাবে নতুন জরিপে প্রাপ্ত বাঘের সংখ্যা প্রকাশ করেছে। আজ থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শুরু হতে যাওয়া বাঘ সংরক্ষণে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রিদের সম্মেলনের প্রাক্কালে এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে রাশিয়া থেকে ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বনে বাঘের সংখ্যা পাওয়া গেছে তিন হাজার আটশ’ ৯০টি। এর আগে ২০১০ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল তিন হাজার দুইশ’।  ৯০টি। গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো নজির নেই। জরিপের হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বাঘের আবাস ভারতে। মোট বাঘের মধ্যে দুই হাজার দুইশ’ ২৬টি বাঘ রয়েছে ভারতেই। দুই জরিপের মধ্যে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও এতে খুব বেশি খুশি হতে পারেননি গবেষকরা। তারা বলছেন, গণনায় বাঘের সংখ্যা বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে হয়তো বাঘের সংখ্যা বাড়েনি। আধুনিক জরিপ পদ্ধতি ও আরও বেশি বেশি এলাকাতে জরিপ পরিচালনার কারণেই গণনায় বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মন্তব্য তাদের। তার পরেও বাঘের সংখ্যা বেশি পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তারা, যা ১৯০০ সালের পর থেকে কখনও দেখা যায়নি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গিনেট হেমলে বলেন, ‘প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় সংখ্যা বাড়া বা কমার প্রবণতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখছি, সেই প্রবণতা সঠিক পথে রয়েছে।’ ২০১০ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়ার পর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদীরা আরও তৎপর হয়ে ওঠেন। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৩টি দেশ  এসব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যাকে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ওই সময়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, জরিপে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও সব দেশে তা হয়নি। রাশিয়া, ভারত, নেপাল ও ভুটানে এই সংখ্যা বাড়লেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাকি দেশগুলোর অবস্থা আশানুরূপ নয়। হেমলে বলেন, ‘উচ্চস্তরের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থাকলেই কেবল এই চিত্র বদলাতে পারে। সুরক্ষিত আবাসের পাশাপাশি শিকারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তবেই বাঘের সংখ্যা বাড়বে। সেদিক থেকে সূত্রটা সহজ এবং আমরা জানি যে, এটা কার্যকরও।’ সোমবার প্রকাশিত এই জরিপে মূলত ২০১৪ সালের বাঘ গণনার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা বাংলাদেশে ১০৬, ভুটানে ১০৩, চীনে ৭-এর বেশি, ভারতে ২২২৬, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৭১, লাওসে ২, মালয়েশিয়ায় ২৫০, নেপালে ১৯৮, রাশিয়ায় ৪৩৩, থাইল্যান্ডে ১৮৯ ও ভিয়েতনামে ৫-এর কম। এছাড়া, কম্বোডিয়ায় কোনো বাঘ পাওয়া যায়নি এবং মিয়ানমারের এ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য নেই। উল্লেখ্য, আজ থেকে ভারতের দিল্লিতে শুরু হচ্ছে বাঘ সংরক্ষণে আন্তঃদেশীয় মন্ত্রীদের সম্মেলন। তিন দিনের এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বাঘ সংরক্ষণে যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাঘ সংরক্ষণে আন্তঃদেশীয় মন্ত্রীদের এটি তৃতীয় সম্মেলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *