গ্রাম বাংলা ডেস্ক: উত্তর-পূর্ব ভারতের সংগঠন উলফার নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে নিতে আসছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। ২ সেপ্টেম্বর দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন তিনি। সফরের সময় তিনি দ্বিপীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তবে এ সফরে মূল এজেন্ডা থাকছে অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফিরিয়ে নেয়াÑ এমনটাই জানালেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। তিনি জানান, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই অনুপকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আবারো গুরুত্ব দেয়া শুরু করে ভারত। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সফরের আগেই বৃহস্পতিবার ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছুটে যান গাজীপুর। গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়ার সাথে কারাগারে দেখা করেন তারা। কারা সূত্র জানিয়েছে, এ সময় ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের কনস্যুলার জেপি সিং কথা বলেন অনুপের সাথে। সাথে ছিলেন দীপক দেব নাথ নামে হাইকমিশনের আরেক কর্মকর্তা। এ সময় জেল সুপারসহ কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুপ চেটিয়ার সাথে কী কথা হয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। তারা জানান, দেশে ফিরিয়ে নিতে আইনগত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন হাইকমিশন কর্মকর্তারা।
ওই দিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামীর আসন্ন ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আইনগত কিছু বিষয়ের সুরাহা হলেই অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তারা জানান। ওই কর্মকর্তা জানান, অনুপকে হস্তান্তরের বিনিময়ে বাংলাদেশেরও কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সফরের সময় এ বিষয়টিও আলোচনা হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় উলফা। এরপর দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র তৎপরতা চালায় সংগঠনটি।
কর্মকর্তারা জানান, অনুপকে ফিরে পেতে দীর্ঘ দিন ধরে ভারত বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। অনুপকে হস্তান্তরে আইনগত বাধা দূর করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ গেল অক্টোবরে দুই দেশের এ চুক্তি অনুসমর্থন দলিল স্বারের মধ্য দিয়ে এ উদ্যোগ আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আবারো অনুপ চেটিয়া সম্পর্কিত ফাইলটি জায়গা বদল করতে শুরু করেছে। তিনি জানান, তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহির্সমর্পণ চুক্তি কার্যকর হলেও আসামের বিদ্রোহী নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেয়ার বিষয়টি উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভরশীল থাকছে। গত বছর ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহির্সমর্পণ চুক্তির অনুসমর্থন দলিল স্বার ও বিনিময় হয়। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মুশতাক আহমদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ নিজ নিজ সরকারের পে এ অনুসমর্থন দলিলে স্বার করেন। এর আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় বহির্সমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বাংলাদেশের এ উদ্যোগের আগেই ভারত এ চুক্তিতে অনুসমর্থন দেয়। চুক্তির আওতায় দণ্ডপ্রাপ্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি যিনি ন্যূনতম এক বছরের সাজা ভোগ করেছেন তাকে এক দেশ থেকে আরেক দেশের হাতে তুলে দেয়া যাবে।
ভারতের সাথে সম্পাদিত এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের তরফ থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ভারত সরকারকে বলা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান। ভারত সরকারকে তাদের খুঁজে বের করে ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে খুনিদের খুঁজে বের করে প্রত্যর্পণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। তারা জানান, কেবল বঙ্গবন্ধুর খুনি নয়, সব খুনিই আইন অনুযায়ী শাস্তির বলয়ে আসবে। বাংলাদেশও সুব্রত বাইন ও সাজ্জাদ হোসেনের মতো পলাতক সন্ত্রাসীদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে বলে কর্মকর্তারা জানান। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। এদের মধ্যে তখনকার প্রভাবশালী সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান সুব্রত বাইনও ছিলেন। কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স সেখানকার কারাইয়া থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা-ঢাকা দেন সুব্রত। গত বছরের শেষ দিকে তাকে আবারো গ্রেফতার করে কলকাতার পুলিশ।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সাধারণ সম্পাদক গোলাপ বড়–য়া ওরফে অনুপ চেটিয়া ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর আদাবর থেকে গ্রেফতার হন। অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং অবৈধ মুদ্রা ও স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট ও পাসপোর্ট আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অবৈধভাবে বিদেশী মুদ্রা রাখার দায়ে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে একই আইনে তৎকালীন মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিনি জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে চিঠি দেন। ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর অনুপ চেটিয়াকে ময়মনসিংহ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হয় তাকে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে রয়েছেন।