এদিকে নাজিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) নতুন স্লিপার সেলের সন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ধর্মীয় উগ্রপন্থি ওই গোষ্ঠীর নতুন কোনো ‘স্লিপার সেল’ নাজিম হত্যায় জড়িত। যদিও গতকাল রোববার পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
নাজিম তার ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের কঠোর সমালোচনা করতেন। এ ছাড়া তিনি সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলেন। ফেসবুকে তিনি জামায়াত-শিবিরেরও সমালোচনায় মুখর ছিলেন।
নাজিম হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের ওয়ারী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নূরুল আমীন সমকালকে বলেন, হত্যার ধরনে মনে হচ্ছে উগ্রবাদীরা নাজিমকে খুন করেছে। ওই উগ্রবাদীদের কার্যক্রম ঠেকাতে ডিবি পুলিশ এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বিশেষায়িতভাবে কাজ করে। এ জন্য হয়তো মামলাটি ওই ইউনিটে চলে যাবে। তবে থানা পুলিশের তদন্ত দল স্থানীয় সোর্স ব্যবহার করে এবং স্বজন, বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু ধারণা পেয়েছে।
ডিবি পুলিশের (পূর্ব) সহকারী কমিশনার সৈকত শাহীন বলেন, উগ্রপন্থি একটি গ্রুপের কয়েক সদস্যের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। হয়তো তাদের পাওয়া গেলে হত্যার জট খুলতে পারে। ডিবি পুলিশের দল নাজিম হত্যায় ছায়া তদন্ত করছে।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল ৮টা থেকে জবি শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ধর্মঘট শুরু করে। তারা বিভিন্ন অনুষদ ভবনে তালা ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মূল ফটক আটকে দেয়। ওই সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না ঢুকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে দুপুর পর্যন্ত বেশির ভাগ বিভাগে কোনো ক্লাস হয়নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের লাগানো তালা ভেঙে ফেলে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ দাবি করেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তালা ভেঙে ক্লাসে ঢুকেছে। তবে তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশকে সব ধরনের প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন প্রক্টর। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নাজিম হত্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও খুনি গ্রেফতারের দু’দিনের আলটিমেটাম দিয়ে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের সমন্ব্বয়কারী ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, নাজিম হত্যাকারীদের গ্রেফতারে জবি প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই। সোম ও মঙ্গলবারের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অগ্রগতি না হলে বুধবার উপাচার্য ভবন ঘেরাও করা হবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জবি শাখার সভাপতি মুজাহিদ অনিক বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট পালন করেছেন। তবে জবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থী বলেন, ধর্মঘট বানচাল করতে জবি ছাত্রলীগের একটি অংশ অনেক নেতাকর্মীর ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরাসরি আন্দোলনে আসতে ভয় পেয়েছে। ধর্মঘট চলাকালে কয়েকটি বিভাগে শিক্ষকরা জোর করে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।