সম্মেলনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে উত্তরের সভাপতি পদে ঢাকা-১১ আসনের সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাদেক খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর দক্ষিণে সভাপতি পদে আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক পদে শাহে আলম মুরাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কমিটি ঘোষণা করেন।
এরপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ঢাকা মহানগরীর ৪৯টি থানা, ১০৩টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের জন্য দুইটি কমিটি করার দায়িত্ব দেন। ফারুক খান উত্তরে এ কে এম রহমতুল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক এবং আবদুর রাজ্জাক দক্ষিণে এম এ আজিজকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করে খসড়া কমিটি জমাও দেন। তবে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি অবিভক্ত নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ মারা গেলে তার স্থলে ‘আদি ঢাকাইয়া’ হিসেবে আবুল হাসনাতকে দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে চূড়ান্ত করেন শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত ছিল যারা মন্ত্রিসভা কিংবা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তারা নগর আওয়ামী লীগের কমিটির শীর্ষ পদে থাকবেন না। এ বিবেচনায় বাদ পড়ছেন ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। একই কারণে বাদ পড়ছেন দক্ষিণ অংশের সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিন বছরের মেয়াদ পার হওয়ার পরেও নতুন কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশাও কাজ করে আসছিল।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণ কমিটি গঠিত হয় এক যুগ আগে। ২০০৩ সালের ১৮ জুন নগর সম্মেলনে মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহত মোহাম্মদ হানিফ ২০০৬ সালের নভেম্বরে মারা গেলে এক নম্বর সহ-সভাপতি ওমর আলী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন। ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওমর আলীসহ বেশ কিছু নগর নেতা ‘কিংস পার্ট’ খ্যাত পিডিপিতে যোগদানসহ বিতর্কিত ভূমিকা রাখায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান বিদ্যমান নগর কমিটির ৬ নম্বর সহ-সভাপতি এম এ আজিজ।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর শাখার সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয় ২০০৩ সালের ১৮ জুন। ওই বছরের জুনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালের নভেম্বরে মারা যান মোহাম্মদ হানিফ। তাঁর মৃত্যুর পর ১ নম্বর সহসভাপতি ওমর আলী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পান ৬ নম্বর সহসভাপতি এম এ আজিজ। গত ২৩ জানুয়ারি এম এ আজিজ মারা যান।