ঢাকা: রাজধানী ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোতে অনুমোদনহীনভাবে গড়ে ওঠা সব ধরনের বাণিজ্যিক ভবন সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে যাদের ছয় মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তাদের সময়সীমা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও দুই সিটি করপোরেশনকে ইতোমধ্যে সচেতনতা গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা যৌথভাবে অভিযানে অংশ নেবে। যদিও শহরের আবাসিক এলাকায় নিজ নিজ অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মালিকপক্ষকেই আগে সুযোগ দেওয়া হবে। এতে অভ্যন্তরীণভাবেই চাপ প্রয়োগ করবে সরকার। আর তাতেও কোনো কাজ না হলে সিদ্ধান্ত রয়েছে সরাসরি ‘অ্যাকশনের’।
সারা ঢাকায় প্রাথমিকভাবে চার হাজার ৯শ’ ২০টি হোল্ডিং পাওয়া গেছে, যেগুলোতে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রথম ধাপের কার্যক্রমে অভিজাত এলাকাগুলোর অবৈধ প্রতিষ্ঠানকেই উচ্ছেদে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল-রেস্টুরেন্টসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আরও যাচাই-বাছাই করে করণীয় ঠিক করা হবে বলেও সরকারি একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
বিষয়টি কড়া নজরদারিতে রয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, তালিকায় রাজধানীর পাঁচ হাজার ৪শ’ ৮৮টি হোল্ডিংয়ের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫শ’ ৬৮টি হোল্ডিংয়ে বৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে আর অবৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে চার হাজার ৯শ’ ২০টি হোল্ডিংয়ে। এসব হোল্ডিং থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পর পর ছয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে ছয় মাসের সময়সীমা শেষে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সেবা দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের বৈধতার সুযোগ যেন না নিতে পারে, সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট আদায় বন্ধ করে দেবে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্লট বরাদ্দকারী কর্তৃপক্ষ রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যে শর্তে বরাদ্দ দিয়েছে, তা ঠিক রাখা হবে। এসব প্লটে যদি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসার বৈধতা দিয়ে থাকে তাও বাতিল করা হবে।
সেই সঙ্গে যারা ‘কনভারশন ফি’ দিয়ে প্লটের ব্যবহার বিধি পরিবর্তন করেছে, তাদের ক্ষেত্রে সরকার কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সচিবালয়ে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, আবাসিক এলাকায় এখন যেসব অনুমোদিত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গেস্ট হাউসসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে- সেসব প্রতিষ্ঠানও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এগুলোর ব্যাপারে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ছাড় দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হতে পারে।
গত ০৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগর এলাকার আবাসিক প্লট ও ভবনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে নিতে ছয় মাসের সময় দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক স্থাপনা সরাতে না পারলে তা উচ্ছেদ করা হবে বলেও সরাসরি সিদ্ধান্ত এসেছে। এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা বিভিন্ন দফতরে গেছে, ব্যবস্থা আসছে অবৈধদের বিরুদ্ধে।