জানা গেছে, যেসব পৌরসভায় জামায়াতের মেয়র ছিল এবং যেসব পৌরসভায় বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ওইসব আসনের কথা বিবেচেনা করে পৌর নির্বাচনে বিএনপির কাছে অর্ধশত আসন দাবি করেছিল জামায়াত। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও জামায়াতের দাবি ছিল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা। বিএনপি মনে করেছিল স্থানীয়ভাবে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে স্বতন্ত্রভাবে জামায়াত তাদের মতো করে প্রার্থী দিয়ে পৌরসভা ও চলমান ইউপি নির্বাচন করছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এ অবস্থায় ইউপি নির্বাচনে থাকা না থাকার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ৪ এপ্রিল রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্যান্য শরিক দল অংশ নিলেও জামায়াত অংশ নেয়নি। এর আগেও পরপর জোটের শীর্ষ নেতাদের দুটি বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কেউ অংশ নেননি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ২০ দলীয় জোটের শরিক দল। ইউপি নির্বাচনের ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের বিষয় স্পষ্ট করে বলা কঠিন। তবে এখনও জোট আছে, ভাঙেনি। তিনি স্বীকার করেন, আগের তুলনায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমন্বয় কম। গত পৌরসভা নির্বাচন জামায়াত তাদের মতো করেছে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও একইভাবে করছে জামায়াত। ইউপি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারছে না। বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারছে না। তাই যে যেভাবে পারছে তাদের মতো করে নির্বাচন করছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলের নেতারা মনে করেন জামায়াতে ইসলামীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে। আগের মতো শক্তি তাদের নেই। জামায়াতে ইসলামী জোটে না থাকলেও কিছু আসে-যায় না। জোটের বৈঠকে জামায়াতের অনুপস্থিতিতে শরিক দলের অনেকে খুশি। তবে বিএনপি হাইকমান্ড মনে করে জামায়াতকে জোটে রাখা উচিত। তাদেরও ভোট ব্যাংক রয়েছে। জোটে থাকলে এই ভোট বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে থাকবে।
এদিকে রাজশাহী, যশোর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর জলঢাকা, সৈয়দপুর, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, ফুলবাড়ী, গাইবান্ধা সদর, গোবিন্দগঞ্জ, চারঘাট, তানোরের মুণ্ডমালা, নওহাটা, নাটোরের সিংড়া, নলডাঙ্গা, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, বগুড়ার কাহালু, জয়পুরহাট, খুলনার পাইকগাছা, ঝিনাইদহের মহেশপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, সাতক্ষীরা, কলারোয়া, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কমলগঞ্জ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, সীতাকুণ্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল মহেশখালী, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার এলাকায় জামায়াতের প্রভাব বেশি। এসব এলাকায় জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হবেন বলে তারা আশা করছেন।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন নেই। দলটি ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত হাইকোর্টে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। জামায়াতের আপিল করার পর এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হলে জামায়াত কী করবে সেই বিকল্পের কথাও ভাবছে দলটি। এরপরও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে চলমান ইউপি নির্বাচনে জামায়াত তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে ব্যাপকভাবে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন কমিশনে কার্যত জামায়াতে ইসলামী দল নিষিদ্ধ। এই দল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। তাদের নির্বাচন করতে হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে হবে। বিএনপি বলেছিল যেসব আসনে ধানের শীষ প্রার্থী নেই, সেখানে জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া হোক। যেসব ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নেই, সেখানে জামায়াতকে বলা হয়েছিল প্রার্থী দিতে, যা স্থানীয়ভাবে আলোচনা সাপেক্ষে সমঝোতায় যাওয়া যেত। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী তাদের মতো করে প্রার্থী দিয়েছে। একলা চলো নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতের এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিগত পৌরসভা নির্বাচন জোটগতভাবে হয়নি। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও জোটগতভাবে হচ্ছে না। সেখানে জোটের শরিক দলের বৈঠক করে নির্বাচনে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি। বিএনপি নিজেরাই জামায়াতের ব্যাপারে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন দলের এই নেতা।
বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আছে। বর্তমানে যৌথভাবে কর্মসূচি না থাকায় মনে হচ্ছে তেমন একটা সমন্বয় হচ্ছে না। কর্মসূচি শুরু হলে আবার সম্পর্ক জোরালো হবে।