গ্রাম বাংলা ডেস্ক: সরকার বিএনপিকে ভাঙার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, অতীতের মতো এখনো ক্ষমতাসীনরা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। দল থেকে কাউকে নেয়া যাবে না। সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে জনগণই তার বিচার করবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসকাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কর্মময় জীবনের ওপর এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার স্মৃতি সংসদ’।
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু, আব্দুস সালাম, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামীমুর রহমান শামীম, মো: সিরাজুল হক, এম এ হালিম, শিরিন সুলতানা, হাফেজ আব্দুল মালেক, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, নিলোফার চৌধুরী মনি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মরহুম সালাম তালুকদারের স্ত্রী মাহমুদা তালুকদার সহ পরিবারের অন্য স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রদল নেতা শহীদুল্লাহ ইমরান, ওবায়দুল হক নাছির, এজমল হোসেন পাইলটের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগ বলেছিলো, বিএনপি ভেঙে যাবে। কিন্তু তাদের বক্তব্য সঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তার সাথে আমার প্রায়ই রাজনৈতিক কথা হয়। কিন্তু তার এ কথা সর্বৈব মিথ্যা এবং সত্যের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। আশরাফ সাহেবের সঙ্গে এ পর্যন্ত আমার তিন বার কথা হয়েছে। প্রথমত, সংলাপের জন্য বিএনপি যখন চিঠি দেয় তখন সাংবাদিকদের সামনেই কথা হয়। অন্য দুবার কথা হয়, যখন জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়। ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর তার সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা কথা বলতে চাই, কিন্তু তারা চায় না। কারণ তারা জানে কথা বললেই আলোচনায় বসতে হবে, নির্বাচন দিতে হবে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আবারো সব দলের অংশগ্রহনে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ও জনগণের দাবি মেনে নিন। তা না হলে মানুষকে নির্যাতন করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-মামলা দিয়ে শেষ রক্ষা হবেনা।
আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সরকারকে নির্বাচনের বাধ্য করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সুপরিকল্পিতভাবে শাসক গোষ্ঠী আন্দোলন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ‘প্রহসনের’ নির্বাচন করে গণতন্ত্র ধ্বংসের মাধ্যমে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এ সময় বিচারকদের অপসারন ক্ষমতা (অভিশংসন আইন) সংসদের হাতে দেওয়ার এবং সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সবক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ রাখতেই এসব করা হচ্ছে।
দেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে দাবি করে বর্তমান সময়ে দলের মরহুম মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি বলেন, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সালাম তালুকদার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি সারা দেশে বিএনপিকে সুসংহত করেছিলেন। সেইভাবে আজো ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে এক কাতারে অবস্থানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গণ আন্দোলন দমানো যাবে না: আওয়ামী লীগের অবস্থা খুবই নড়বড়ে মন্তব্য করে একই অনুষ্ঠানে মতাসীন দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না’ বলে উস্কানি দেবেন না। রাজনীতিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে দিন। আপনারা গণআন্দোলন দমাতে পারবেন না। সময় আসলে জনগণ বুঝিয়ে দেবে গণআন্দোলন কাকে বলে।
দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করে সরকার বোকার স্বর্গে বাস করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। গণ অসন্তোষের ভাষা জনগণকে শেখাবেন না। যখন সময় আসবে, তখন জনগণই বুঝিয়ে দেবে গণঅসন্তোষ কি? কাঁচের ঘরে থেকে ঢিল ছুড়বেন না।
মির্জা আব্বাস বলেন, নির্যাতন-নিপীড়ন করে নমরুদ ফেরাউন টিকতে পারেনি। আওয়ামী লীগও পারবে না। আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের কথা শুনে মনে হয় তারা আজীবন মতায় থাকবেন। ভাব দেখে মনে হয় কিয়ামত পর্যন্ত মতায় থাকতে চায় তারা।
মির্জা আব্বাস বলেন, হিটলার মুসোলিনির মতো নির্যাতন চালাতে থাকলে গণআন্দোলন ভিন্ন রূপ নেবে। হয়তো আমি থাকবো না কিন্তু সরকার পতনের গণআন্দোলন থেমে থাকবে না। নিজেদের নড়বড়ে অবস্থান বুঝুন কাঁচের ঘরে বসে বাইরে তাকাবেন না।
এ সময় তিনি বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সালাম তালুকদার ব্যক্তি পছন্দের চেয়ে রাজনীতি পছন্দ করতেন। তার মতো রাজনীতিবিদের মৃত্যু দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি।