প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবা-মাহীন প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র। আমি সব সময় উপলব্ধি করি যে, অটিজম শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে মায়ের। তাই তাদের মা-বাবা যখন থাকবে না, তখন এদের কী হবে? এরা কোথায় যাবে? আমরা এ ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিচ্ছি। বাবা-মা যখন থাকবে না, তখন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের লালন-পালনের ব্যবস্থা আমরা করবো। আমরা ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্ট করে এমনভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো যাতে ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলেও কেউ তা বন্ধ করতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০১৬ উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অটিজমসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রকাশেরও অধিকার আছে। তাদেরকে সে সুযোগ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জেলা-উপজেলাতে একটি করে অটিজম চিহ্নিতকরণ ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, শুধু ঢাকায় নয় ঢাকার বাইরেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ৬৪ জেলায় এবং ৩৯টি উপজেলায় ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে অটিজম কর্নার চালু করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ২০ লাখ প্রতিবন্ধী সেবা গ্রহণ করছে। ঢাকায় শিশু হাসপাতাল সহ ১৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করে অটিজম সমস্যাজনিত শিশুদের চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলাতেও একটি অটিজম শনাক্তকরণ এবং তাদের কাউন্সেলিং করা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, যারা সেবা প্রদান করবেন তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে যেমন সেনানিবাসে ‘প্রয়াস’ নামে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় করা হয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি আমাদের প্রতিটি সেনানিবাসে এই প্রয়াসের শাখা তৈরি করা হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মো. বাবুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন এমপি। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরিন আরা সুরাত আমিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অটিজম ও স্নায়ুবিক সমস্যাজনিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এ উপলক্ষে জাতিসংঘে অটিজমবিষয়ক মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কারণে অনুষ্ঠানে তার ধারণকৃত বক্তৃতা উপস্থাপন করা হয়।
পৃথিবীর বিখ্যাত কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং মনীষী জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী থাকার পরেও প্রতিভাগুণে বিশ্ববরেণ্য হতে পেরেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীরা কোনো না কোনো বিষয়ে বিশেষ মেধাসম্পন্ন হয়। আমরা যদি প্রতিবন্ধীদের মেধা বিকাশের সুযোগ দেই, তাহলে তারা সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারে। আমরা এখন সে চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, একটা সময় ছিল প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক বাচ্চাদের বাবা-মাকে অনেক সময় মানুষের কাছে হেয় হতে হতো। অটিস্টিক বাচ্চাকে লুকিয়ে রাখা হতো। এ জন্য মাকে দোষ দেয়া হতো। আসলে অটিস্টিক হয়ে জন্মাবার পেছনে মা-বাবার কারও কোনো হাত নেই। এখন এই ধারণাটা বদলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আর প্রতিবন্ধিতার জন্য মা-বাবাকে দোষারোপ করার সেই সুযোগটা নেই। থাকাও উচিত না।
সকলেরই মনটা এখন বড়ো করা উচিত। তিনি বলেন, আমরা মনে করি তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে তারা যদি আমাদের সমাজকে কিছু দিতে পারে সেটা আমরা নেব। অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি তার কন্যা ও সমাজকর্মী সায়মা ওয়াজেদের কাছ থেকেই অটিজম বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, সোস্যালজিতে লেখাপড়া করা সায়মার আগে থেকেই এসব বিষয়ের প্রতি গভীর টান ছিল। প্রধানমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সায়মার কর্মপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা কিভাবে কাজ করেন তা তিনি দেখে এসেছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘে প্রথম যে রেজ্যুলুশন হয়েছে সায়মাই সেই উদ্যোগ নিয়েছে। জাতিসংঘ রেজ্যুলুশনগুলো নেয়াতে সারাবিশ্বে এটি সাড়া ফেলেছে। সেটিই আমাদের সবচেয়ে বড়ো অর্জন। কাজেই আজকে আর অটিজম শিশুরা অবহেলায় থাকবে না। তাদের জন্য আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী নীল আলো জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধী দিবসের কার্যক্রম উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের পরিবেশনায় ‘আলোর ভুবন’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে গিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।