প্রথম দফায় ভোট হয়েছিল ৭১২টি ইউনিয়ন পরিষদে । প্রাণহানি ঘটেছিল ১১ জনের। আহত, বর্জন, ব্যালট ছিনতাই, সিল মারার ঘটনা সবার জানা। গতকাল ৬৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে। প্রানীহানী হয়েছে ১০ জনের। তপসিল ঘোষনার পর থেকে প্রথম দফা ভোটের আগ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন ১১জন। মোট ৬ দফার এই নির্বাচনের দুই দফায় ৩২ জনের প্রানহানী ঘটল। মানে দুই দফায় এক তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে ১৩৫১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হলেন ৩২ জন ভোটারের লাশের উপর দাঁড়িয়ে। এই হিসেবে মৃতের হার দাাঁড়ায় শতকরা ২.৩৬ ভাগ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ভোটের মালিক জনগন ভোট দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২.৩৬ শতাংশ। এই অবস্থা চলতে থাকলে ইউপি নির্বাচন শেষ হতে হয়তবা আগে পিছে একশ লোকের প্রান হানীর সম্ভাবনা দেখা দিল। গনতন্ত্রের অর্থ যদি ভোট দিতে গিয়ে ভোটারের মৃত্যু হয় তবে এটা কোন গনতন্ত্র? প্রশ্নের উত্তর কেউ দিবে না এটাই জাতির জানা আছে। দুই ধাপের নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে নিহত ৩২ জনের ভোট কে দিল? তাহলে বলা উচিত ওরা মরহুম ভোটার।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রত্যেক সরকার জনগনের অধিকায় আদায় করতে গিয়ে জনগনের লাশের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে বা দখলে যায়। জীবিত লোকের মৌলিক অধিকার যদি মৃত্যু হয় তবে এই অধিকারের দরকার কি? গনতন্ত্রের ফসল যদি লাশ হয়ে ঘরে আসে তবে এই ফসল কে ভোগ করবে? ছোট শিশুর সামনে যদি তার বাবাকে ভোটের কারণে খুন হতে হয় তবে এই ভোটের দরকার আছে ? ক্ষুদার্থ ভ্যান চালকের পরিবার যদি এক মুঠো চাল ও একটু আটার জন্য পথ পানে অপেক্ষা করে গৃহকর্তার লাশ পায় তাহলে ওই গনতন্ত্রের প্রয়োজন আছে? স্কুলের শিশুটি যদি স্কুল ব্যাগ নিয়ে হাসি খুশি মুখে মায়ের কোলে না ফিরে লাশ হয়ে আসে তবে ওই মায়ের জন্য গনতন্ত্র একটি অভিশাপ নয় কি? বাংলাদেশের হতভাগা মানুষ এই গনতন্ত্র চায় না। তারা দু বেলা ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে চায়। লাশ হতে চায় না। তারা ক্ষমতা চায় না। ভোটও দিতে চায় না। শুধুই বাঁচতে চায়।
প্রত্যাশা থাকবে, আগামী ৪ ধাপের নির্বাচনে যেন একটি লাশও না পড়ে। তবেই গনতন্ত্রের আশা করা যেতে পারে। অন্যথায় ইতিহাস ক্ষমা করেছে বলে একটি উদাহরণ ও নেই। অতীতে কেউ ক্ষমা পায় নি। বর্তমান সরকারও ক্ষমা পাবে বলে মনে হয় না। কারণ এরশাদ,বেগম জিয়া তারা জোর করে লাশের উপর দাঁড়িয়েও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারেন নি। লাশের উপর ভর করে ক্ষমতায় যেতেও পারেন নি। মালিক কে খুন করে কোন দিন কর্মচারীর চাকুরী পাওয়া যায় না । তেমনি রাষ্ট্রের মালিক জনগনকে খুন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করাও যাবে না। হয়ত সাময়িকভাবে ক্ষমতা উপভোগ করা যায়। ভুলে গেলে ভুল হবে যে, অধিকার দিতে গিয়ে প্রাণ কেড়ে নেয়া জঘন্যতম অন্যায়। এই অপরাধ সবাই ক্ষমা করলেও ইতিহাস ও সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করবেন না।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইন চীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম