শ্রীলংকায় এ ঘটনায় প্রথম প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন পেরেরা। শালিকার কর্ণধার পেরেরা খুব বড়সড় ব্যবসায়ী নন। রয়টার্সকে তিনি জানান, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জেআইসিএ) থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান ও কিছু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ওই অর্থ আসার কথা ছিল। তার দাবি, জেআইসিএ’র সঙ্গে তার সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু জাপানে যোগাযোগ আছে, এমন একজন পরিচিত লোকের মাধ্যমে তার সঙ্গে জেআইসিএ’র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবরে শালিকা প্রতিষ্ঠিত হয়। নিবন্ধন নথিপত্রতে বলা আছে, প্রতিষ্ঠানটি অল্প খরচে বাড়ি নির্মান করে ও কিছু সামাজিক সেবা প্রদান করে।
পেরেরার বক্তব্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তিনি যে পরিচিত লোকের কথা বলেছেন, তার সঙ্গে পেরেরারই দেয়া ফোন ও ইমেইলে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জেআইসিএ জাপানের একটি সরকারী সংস্থা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহায়তা দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটি থেকে জানানো হয়, শ্যালিকা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। এমনকি মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমেও ছিল না। সংস্থার মুখপাত্র নাওয়ুকি নেমেতো বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না।’ তদন্ত চলতে থাকায় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে শ্রীলংকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখা।
পেরেরা সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা আসল লোক। আমরা কোন অবৈধ কিছু করছি না।’ ৩৬ বছর বয়সী এ নারীর পাশে ছিলেন স্বামী রামানায়াকে ধামকিন। তিনিও শালিকার একজন পরিচালক। পেরেরা এখন মনে করছেন, তাদের ওই পরিচিত লোকটি হয় হ্যাকারদের সহযোগী, নয়তো ভুক্তভোগী। তার মতে, তাকে ফাঁদে ফেলে এখানে জড়িত করা হয়েছে।
তার কাছে থাকা সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে আসা রেমিটেন্স অ্যাডভাইসরি ফর্ম দেখেছে রয়টার্স। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ সংস্থা ওই অর্থ পাঠাচ্ছে উল্লেখ রয়েছে। বলা আছে, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে জেআইসিএ’র কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল একটি বৈদ্যুতিক প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যান একে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সংস্থার প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইন উদ্দিন বলেন, ‘তারা হয়তো সরকারী সংস্থার নাম ব্যবহার করেছে, একে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে।’
পুলিশ পেরেরার ওই পরিচিত লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বৃহ¯পতিবার কলম্বো মেজিস্ট্রেট কোর্টে দাখিলকৃত একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, এক জাপানি মধ্যস্থতাকারী ওই অর্থের সংস্থান পেতে সাহায্য করেছে।
প্রতিবেদনে পেরেরার এ পরিচিত লোক ও কথিত জাপানি মধ্যস্থতাকারীদের নাম দেয়া হয়েছে। তবে পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জাপানি ওই ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি এখন ভ্রমণ করছেন। তার পক্ষে তৎক্ষণাৎ কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয়। পেরেরা, তার স্বামী, শালিকা ফাউন্ডেশনের চার পরিচালক ও পেরেরার পরিচিতদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কোর্ট। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সরকারের এ পদক্ষেপকে ‘অবিচার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন পেরেরা।
স্ব-বক্তব্য অনুযায়ী, পেরেরার ব্যবসা ধুঁকছে। তার আরও চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। একটি প্রকাশনা সংস্থা, একটি অটো পার্টস কো¤পানি, একটি নির্মান কো¤পানি ও একটি পশুখাদ্য প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে তার প্রকাশনা সংস্থায় এত বড় ক্ষতি হয় যে, তিনি নিজের ক¤িপউটারগুলোও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এখন তিনি ইন্টারনেট ক্যাফে থেকে কিছু ব্যবসা করেন। তার দাবি, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পিজ্জা হাট ও কিছু রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে, পেরেরা ও তার পরিচিত লোক তাকে জেআইসিএ থেকে ২ কোটি ডলার পাইয়ে দেয়ার কথা জানান। এ লোকটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পেরেরাকে বিনিয়োগকারী ধরিয়ে দিতে সহায়তা করে আসছেন। তাদের চুক্তি মোতাবেক, ওই অর্থ দুইভাগ হবে। একটি যাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান প্রকল্পে। আরেকটি যাবে বাড়ি নির্মান প্রকল্পে, যেটি নিয়ন্ত্রণ করবেন ওই ব্যক্তি। শ্রীলংকান পুলিশের গত সপ্তাহের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা আছে, পেরেরা আগে ভাগেই প্যান এশিয়া ব্যাংকের কলম্বো শাখায় বলে রেখেছিলেন যে, তার কো¤পানি ২ কোটি ডলার পেতে পারে একটি জাপানি তহবিল থেকে। তদন্তের স্বার্থে কথা বলা থেকে বিরত থেকেছেন প্যান এশিয়া ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
এ তদন্ত প্রতিবেদন দেখেননি বলে জানান পেরেরা। গত সপ্তাহে মেজিস্ট্রেটের আদালতে ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পেরেরা তাদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, সব ঠিকঠাক হলে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ৭৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ও তার পরিচিতের অ্যাকাউন্টে যাতে ১ কোটি ১১ লাখ ডলার পাঠানো হয়। এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন পেরেরা। তিনি বলেন, এতেই প্রমাণ হয় দুটি প্রকল্পের জন্য ওই অর্থ আসছিল। বাকি অর্থ করের জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল।
৪ই ফেব্রুয়ারি প্যান এশিয়া ব্যাংক থেকে শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে রেমিটেড হয়। কিন্তু অস্বাভাবিক রকম বড় হওয়ায় এ অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দিতে চায়নি ব্যাংক। বরং, আরও ব্যাখ্যা চেয়ে বসে ব্যাংকটি। ৯ই ফেব্রুয়ারি, পেরেরাকে প্যান এশিয়া ব্যাংক থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জানিয়ে দিয়েছে ওই অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য।