ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

Slider খেলা

মনকসসদ
গেইল আউট, আউট স্যামুয়েলসও। দলের রান সবে ১৯। ওভার পার তিন। ক্যারিবীয় দ্বীপজুড়ে হতাশার ছায়া। নাহ! আর বুঝি জেতা সম্ভব হলো না। ২০ ওভারে ১৯৩ রান মোটেও ছেলে খেলা নয়। তার ওপর ভারতের নিজের মাঠ। তাদের বোলাররাও দুর্দান্ত আগের খেলাতেই ভারতের কাছে নাকাল হয় অস্ট্রেলিয়ার মতো বাঘা দল। আর আগের খেলায় দুর্বল আফগানিস্তানের কাছেও হার মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অনেকেই টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন খেলা শেষ। যেমনটি করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনও। কিন্তু রহস্যের অনেক কিছুই বাকি ছিল। টিকে থাকতে পারলে অনেক বড় লক্ষ্যও যে ছোট হয়ে যায়। আর অধৈর্য হলে বাংলাদেশের মতো তিন বলেও দুই রান নেয়া সম্ভব হয় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞতার দুই ব্যাটসম্যান জনসন চার্লস ও লেন্ডল সিমন্স বিশ্বকে দেখালেন তারা কেবল গেইল নির্ভর কোন দল নয়। ক্রিকেট যেন নবযৌবনা হয়ে ফিরছে সোবার্স-রিচার্ডসের দেশে। অর্থ সঙ্কটে বিশ্বকাপ না খেলার হুমকি দেয়া দলটিই এখন শিরোপার অন্যতম দাবিদার।
বছরটা যেন এবার ক্যারিবিয়ানদেরই। ফেব্রুয়ারিতে এই বাংলাদেশ থেকেই ভারতকে হারিয়ে জয় করে নেয় অনূর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। গতকালই ওয়েস্ট ইন্ডিজের নারী দল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। ২০১২ সালের চ্যাম্পিয়নরা ফের ফাইনালে উঠেলো। রোববার কলকাতায় ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। দু’দল একই গ্রুপ থেকে উঠে এলো। গ্রুপ পর্বের প্রথম খেলাতে মুৃম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গেইলের চোখ ধাঁধানো শতরানে। এ জন্য টস জিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি বোলিং বেছে নিয়েছিলেন। এ মাঠে পরে ব্যাটিং করা দলেরই জয়ের নজির বেশি। তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় ছিনিয়ে নিলো ২ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে। ৩ বলে ৩ রান দরকার যখন তখন ধারাভাষ্যকাররা বাংলাদেশের কথা বলছিলেন বারবার। একই অবস্থায় থেকে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ ছক্কা হাঁকাতে গিযে আউট হয়ে হারিয়ে দেন বাংলাদেশকে।
শেষ ওভারে ওযৈস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল আট রান। ক্যাপ্টেন কুল জুয়াই খেললেন। বল তুলে দিলেন কোহলির হাতে, যিনি তার প্রথম ওভারে  আউট করেছিলেন দারুণ খেলতে থাকা চার্লসকে। অথচ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ২ ওভার তখনও বাকি ছিল। আগের দুই ওভারে তিনি দিয়েছিলেন ২০ রান। আর ১৪তম ওভারে কোহলি তার প্রথম বলেই ভাঙ্গেন গেড়ে বসা জুটি। আউট করেন ফিফটি করা জনসন চার্লসকে। টি-২০তে আগের ৪২ খেলার ১১টিতে বল করে মাত্র তিন উইকেট নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের অক্টোবরে রাজকোটের মাঠে বল করেছিলেন তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
১৯৯৩ সালে হিরো কাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ রান দরকার ছিল জয়ের জন্য। তখন শচীন টেন্ডুলকার বল তুলে নিয়ে দলকে জিতিয়ে ফিরেছিলেন। কোহলি শচীন হতে পারলেন না। কোহলি প্রথম দুই বলে এক রান দিলে ভারতজুড়ে আনন্দ। মনে হয় ভাগ্যে শিঁকে ছিড়বে এবার। কিন্তু পরের দুই বলে চার আর ছক্কা মেরে খেলা শেষ করে দেন অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। ২০ বলে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন রাসেল। তিনটি চারের পাশে ছক্কা ছিল চারটি। অথচ আগের ৩১ ইনিংসে তার ছক্কার সংখ্যা ১১। জাতীয় দলের হয়ে ৪০ ম্যাচে রাসেলের এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। অপর প্রান্তে জয়ের অন্যতম নায়ক লেন্ডল সিমন্স অপরাজিত ৫১ বলে ৮৩ করে। তিনি ছক্কা হাঁকান পাঁচটি আর চার সাতটি। অথচ লেন্ডল সিমন্সকে বিশ্বকাপ দলেই রাখেন নি নির্বাচকরা। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। আন্দ্রে ফ্লেচার আহত হয়ে গেলে উড়িয়ে আনা হয় তাকে। এসেই সরাসরি সেমিফাইনালে। জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ টি-২০ খেলেন তিনি ২০১৫ সালের ১৪ই জানুয়ারি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই খেলাতেও ৪৯ রান করেছিলেন সিমন্স। ৩৫ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি লেন্ডল সিমন্সের এটি পঞ্চম ফিফটি। ৩১ বছর বয়সী ত্রিনিদাদের এই ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসেন দলের রান যখন ১৯। চতুর্থ উইকেটে রাসেলের সঙ্গে গড়েন ৩৯ বলে ৮০ রানের জুটি। ম্যাচসেরাও হন তিনি। ঠিক ৫০ রানের মাথায় কট আউট হয়েছিলেন সিমন্স হারদিক পান্ডিয়ার বলে। কিন্তু বলটি নো হওয়ায় বেঁচে যান তিনি। ফ্রি হিটে ছক্কাও তুলে নেন। আরও একবার সীমানার কাছে ধরাও পড়ে গিয়েছিলেন কোহলির হাতে। কিন্তু দড়িতে পা ঠেকে যাওয়ায় রক্ষা পান সে যাত্রাতেও। এর আগে নো বলের কারণে জীবন পেয়েছিলেন চার্লসও। আসলে সৌভাগ্য যখন পাশে থাকে তখন পাহাড়ও নুয়ে আসে পায়ের কাছে।
চার্লস শেষ পর্যন্ত কোহলির বল হাঁকাতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়েন রোহিত শর্মার হাতে। ৩৬ বলে ৫২ করেছিলেন তিনি ৭ চার ও ২ ছক্কায়। ২৮ খেলায় এটি তার তৃতীয় ফিফটি। তৃতীয় উইকেটে সিমন্সের সঙ্গে ৯৭ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন এই ওপেনার।
ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল মাত্র ৬ বলে ৫ রান করে আউট হন। জসপ্রিত বুমরাহ তার ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড করেন তাকে।  নিচু হয়ে আসা ফুলটস বলটি তার ব্যাট ও পায়ের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পে আঘাত হানে। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে আশিষ নেহরার ফিরিয়ে দেন মারলন স্যামুয়েলসকে। ২০১২ বিশ্বকাপ জয়ের এ নায়ক করেন সাত বলে আট রান। তিন ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ মাত্র ১৯/২। সেখান থেকেই দলকে মহাকাব্যিক জয়ের বন্দরে পৌছে দেন চার্লস, সিমন্স ও রাসেল। ১০ ওভার শেষে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৮৪। ১১.২ ওভারে তারা ১০০ রান পূর্ণ করে। চার্লস চার মেরে নিজের ফিফটি আর দলের ১০০ পার করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে যায় চার আর ছক্কায়। তারা ছক্কা হাঁকায় মোট এগারটি আর ভারত মাত্র চারটি। আর ভারতের ১৭ চারের বিপরীতে ২০টি চার মারে ক্যারিবিয়নরা।

টসে হেরে ভারত মন্দ করেনি। মাত্র ২ উইকেটে ১৯২ রান করেরছিল তারঅ। এরচেয়ে ভাল আর কী করার ছিল। ৪৭ বলে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন বিরাট কোহলি। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের তিন ম্যাচ মিলিয়ে সর্বাধিক ২৯৫ রান বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের। তবে গতকাল তামিমের আরও নাগালে পৌঁছেন ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় পর্বের পাঁচ ম্যাচে কোহলির সংগ্রহ ২৭৩ রান। ১৩৬.৫০ ব্যাটিং গড় নিয়ে আসরে কোহলির এটি তৃতীয় অর্ধশতক। তিনবারই থাকেন অপরাজিত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৪ রান করে নআউট হয়েছিলেন কোহলি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৫ আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঠিক আগের খেলাতে ৮২ রান করে দলকে জিতিয়েই তবে মাঠ ছাড়েন। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড মিলিয়ে তৃতীয় সর্বাধিক ২২২ রান আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদের।
গতকাল শুরুতে সংযমী ব্যাটিং দেখালেও ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বড় রানের দেখা পায় ভারতীয়রা। আন্দ্রে রাসেলের ওই ওভারে ১৯ রান তুলে নেয় ভারত। এতে আন্দ্রে রাসেলের নো-বলে ছক্কা হাঁকান ওপেনার রোহিত শর্মা । ফ্রি-হিটে পরের বলেও রোহিত হাঁকান ছক্কা। এতে ৫.৪ ওভারে দলীয় ৫০ রান পূর্ণ হয় ভারতের। ৭ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬২/০। গতকাল টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। ওয়াংখেড়ে মাঠে শেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের চারটিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় টসজয়ী দল।  শেষ চার ম্যাচে এখানে টসজয়ী দলই হেসেছে শেষের হাসি। সেমিফাইনালে ভারত একাদশে সুযোগ নেন আজিঙ্কা রাহানে ও মনীশ পা-ে। ইনজুরির কারণে দলের বাইরে থাকেন যুবরাজ সিং ও শিখর ধাওয়ান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *