ঢাকা: ‘সুইফট’ সিস্টেম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) ফিলিপাইন ও শ্রীলংকায় স্থানান্তরের ঘটনাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল ডাকাতি হিসেবে দেখছে বিএনপি।
দলটি বলছে, ‘এটি হ্যাকিং নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল ডাকাতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অথরাইজ পারসন বা সুইফট সিস্টেমের পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেই রিজার্ভ চুরির রহস্য উদঘাটন হবে।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার (৮০০ কোটি টাকা) লুণ্ঠন একটি বিশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন দলটির নির্বাহী সদস্য তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ শামা ওবায়েদ।
সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি কেলেঙ্কারির পর রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি কেবল আর্থিক ক্ষতি নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, এই রিজার্ভ চুরিতে যারা বেনিফিশিয়ার, সেই ফিলিফাইনে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, সিনেটে শুনানি হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশ নীরব। এই নীরবতার কারণ কি? তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউছুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।
প্রজেক্টর প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শামা ওবায়েদ দেখান, গত ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি সোসাইটি ফর বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়াল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) সিস্টেম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার (৮০০ কোটি টাকা) ফিলিফাইন ও শ্রীলংকায় স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে ফিলিফাইনে ৮১ মিলিয়ন ও শ্রীলংকায় গেছে ২০ মিলিয়ন ডলার।
এছাড়া আরো ৮৫০ মিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা হয়। কিন্তু প্রাপকদের পাঠানো তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ওই ট্রানজেকশন প্রসেস করেনি- বলেন শামা ওবায়েদ।
তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অসংখ্য নোটিফিকেশন পাঠিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় বা সংবাদ মাধ্যমকেও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেনি। ঘটনার তিন সপ্তাহ পর খণ্ড খণ্ডভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়।
বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে না দেখে একটি নির্মোহ প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ হিসেবে দেখার অনুরোধ জানিয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, সুইফট বেলজিয়ামভিত্তিক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বিশ্ব পরিসরে ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটগুলোর আর্থিক লেনদেনের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকও সুইফট’র নিরাপত্তাগত সহযোগিতা গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে সুইফট কর্তৃক সরবরাহ করা একটি নেটওয়ার্ক টার্মিনাল। এ টার্মিনালে মাত্র তিনটি কম্পিউটার ব্যবহার হয়। এই কম্পিউটারগুলো বাংলাদেশে ব্যাংকে ব্যবহৃত অন্যসব কম্পিউটার থেকে একেবারে ভিন্ন। একটি নিরাপত্তা দেওয়ালের মধ্যে এ কম্পিউটার ৩টি রাখা। এ কম্পিউটার দিয়ে অন্য কোনো কাজ করা হয়না। এটি কেবল সুইফটের সঙ্গে যোগাযোগ বার্তা আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহার হয়। আর এটি যিনি ব্যবহার করেন, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অথরাইজ পার্সন।
শামা ওবায়েদ বলেন, আমরা সুইফটের সিআইও মাইক ফিশ’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেছেন, সারা বিশ্বে ১০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান সুইফটের সেবা গ্রহণ করছে। সুইফট প্রতিদিন ২ কোটি বার্তা দেওয়া নেওয়া করে। আমাদের তথ্য ভাণ্ডারে আজ পর্যন্ত অননুমোদিত তথ্য ঢোকেনি।
সুইফট নেট টার্মিনাল ব্যবহারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শামা ওবায়েদ বলেন, সুইফট নেট টার্মিনাল একক নির্দিষ্ট সিস্টেম ব্যবহার করে। এর ফিজিক্যাল সিস্টেমের জন্য বিশেষ লাইসেন্সের ব্যবস্থা আছে। যেমন-ডঙ্গল (পেনড্রাইভের মত একটি যন্ত্র), যার মধ্যে রয়েছে একটি সার্টিফিকেট, অনুমোদিত ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড।
সুইফট সিস্টেম লগইন করা তখনই সম্ভব হয়, যখন সার্টিফিকেট ও পাসওয়ার্ড দু’টোয় থাকে। কারণ, ডঙ্গলের মধ্যে নিহিত সার্টিফিকেট ও পাসওয়ার্ড পরস্পর যৌথভাবে সংযুক্ত। সুতরাং অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিসেস্ট অন্য কেউ ব্যবহারের সুযোগই নেই- বলেন তিনি।