মো:আলী আজগর খান পিরু:
সরকারি ভাবে সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা থাকলে গাজীপুরে বিভিন্ন সেক্টরে বেড়েই চলছে শিশু শ্রম। যে বয়সে নতুন নতুন বই নিয়ে স্কুলে যাওয়া এবং পাশাপাশি খেলার মাঠে ধুলো উড়ানোর কথা, সে বয়সে তারা করছে অক্লান্ত পরিশ্রম। রা¯Íা ধুলোবালি গায়ে মেখে রোধে পুড়ে পেটের দায়ে খাটছে হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনি। এই রকম একটি শিশু শ্রমের সেক্টর হচ্ছে লেগুন গাড়ি। দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুরাতন বিকল হওয়া মাইক্রোবাস ও পিকআপ সংগ্রহ করে এর পেছনের অংশ কেটে ফেলে দিয়ে তৈরি করছে যাত্রীবাহি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন লেগুনা। এসব পরিবহনের হেলপার, ড্রাইভাররা বেশিরভাগই অপ্রাপ্ত বয়স্ক, বয়স ১০ বা ১১ বছরের মধ্যে। যাদের তেমন কিছুই বুঝের উঠার বয়স হয়নি। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হেলাপাড়, ড্রাইভাররা কোন প্রকার রোড সাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিক চিহ্ন, ট্রাফিক নিয়মাবলী বা¯Íবে চিহ্নিত করতে পারেনা। শুধু মটরযান ও মটরযানের ইঞ্জিন সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান আছে। বয়স ও শারীরিক দিক থেকে তারা একেবারেই উপযুক্ত নয়।
নেই কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স বা রিআরটি’র অনুমোদন। কর্তৃপÿ শুধু দেখেই যাচ্ছে। ব্যবস্থা নিচ্ছে না এসব অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে। আর প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে মহাসড়কগুলোতে। প্রাণ হারাচ্ছে শতশত মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে ফয়সাল, শামিম, সোহাগ, মফিজ, সাইফুল, সাগরসহ অসংখ্য শিশু পরিবহন শ্রমিকের সাথে দেখা হয় এবং কথা হয়। যাদের সবাই পরিবারের দারিদ্রতা কাঁেধ নিয়ে লেগুনা হেলপাড়ি বা ড্রাইভারি করছে।
প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ফসালের সাথে বয়স ১১ কি ১২, হালকা পাতলা গড়নের তামাটে কালার মাঝারি সাইজের ছেলেটি, পিতার নাম বাক্কার, বাড়ির গাজীপুরের হাড়িনাল এলাকায় পরিবারে মা, বাবা, আর এক ভাইসহ মোট চার সদস্যের পরিবার। উপার্জনÿম ব্যাক্তি ফয়সাল একা তার বাবা আগে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করত কিন্তু এখন কাজ করতে পারেনা, তাই ফয়সালের আয়েই চলে সংসার এবং ছোট ভাই ফাহিমের লেখা পড়ার খরচ।
শামিম পিতার নাম সোলেমান সিরাগঞ্জ জেলার ইনাতপুর এলাকার ১০ বছরের মাঝাড়ি সাইজের শ্যাম বরন ছেলেটি তাদের পরিবারে দুই ভাই, দুই বোন লেগুনার হেলাপাড় সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত গলা ফাটিয়ে যাত্রীদের ডেকে ডেকে গাড়িতে তুলে এবং ভাড়া তোলে সাড়া দিনে তার আয় ১শ থেকে দেড়শ টাকা। লেখা পড়া করেনি পরিবেশ পরিস্থিতি কিছু বুঝে ওঠার আগেই নেমে পড়েছে পেটের তাগিদে।
সোহাগ পিতা আব্দুল কাদির ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও এলাকার হালকা পাতলা শ্যামবরন ছেলেটি বাড়িতে দু’ভাই মা, বাবা, সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। লেখা পড়াতো দূরের কথা তিন বেলা তিন মুঠো খাবার জোটেনা। এমইন শত শহ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা লেগুনা হেলপাড়, ড্রাইভারি করছে। অহরহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। এসব লেগুনা গাড়িতে প্রতিদিন শত শত যাত্রি চান্দনা চৌরা¯Íা থেকে শিববাড়ি রেলগেট পর্যন্ত যাতায়াত করে। এইসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকদের হাতে থাকে যাতায়াতকারী যাত্রীদের জীবন।
মাসের পর মাস বাড়ছে লাশে মিছিল। ÿতিগ্রস্থ হচ্ছে শত শত পরিবার। এমনও দেখা গেছে লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের এক মাত্র উপার্জনÿম ব্যাক্তিটি নিহত হয়েছে। তাতেকরে পুরো পরিবারটি রা¯Íায় নামতে হয়েছে। তাছাড়া গাজীপুর শিল্প এলাকা হওয়াতে এখানে লÿ লÿ গার্মেন্ট শ্রমিক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে এখানে কাজ করে জিবীকা নির্বাহ করছে। গ্রামের বাড়িতে বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়েসহ পুরো পরিবারটি একজনের উপর নির্ভরশিল। সেই ব্যাক্তিটির কিছু হলে পুরো পরিবারের উপর যেন অভিশাপ নেমে আসে।
অপরদিকে লেগুনা মালিকদের ভাব দেখে মনে হয় সরকারি কোন অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে না এসব অবৈধ গাড়ি মহাসড়কে চলতে। ভাঙ্গা লক্কর ঝক্কর অবৈধ গাড়ি রা¯Íায় চলাচলে কোন রকম অনুমোদন ছড়াই ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এসব গাড়ি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে মহাসড়কগুলোতে এবং খেটে খাওয়া মানুষ চলাচল করছে ওইসব গাড়িতে।
ওইসব গাড়ির চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে পেরে মনে করছে তারা খুব দÿ। গাড়ি চালানোর নিয়মনীতিও জানে না তারা। পুলিশ কাগজপত্র দেখতে হাত বাড়ালে হাতে আসে কাগজপত্রে পরিবর্তে কিছু টাকা।
বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলে শুধু দুর্ঘটনা নয় মহাসড়কে লেগে যায় দীর্ঘ গাড়ির জট। আর ভোগান্তি-দুর্ভোগ এসব সাধারণ মানুয়কেই পোহাতে হয়।
গাজীপুরে অসংখ্য লেগুনা হাইওয়েতে চলছে। কোন গাড়ির ফিটনেস নেই। গাজীপুরে থানা পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশে গাড়ির প্রতিদিন কমপÿে ১০০টি লেগুনা ব্যাবহার করছে। তারা লেগুনা নিয়ে কাজ সারেন।
এদিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথিরিটি বলছে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স্ক ব্যক্তি অপেশাদার এবং ২০ বছর বয়স্ক ব্যক্তি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারে। পেশাদার এবং অপেশাদার লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যাদের বয়স (২০/১৮) নির্ধারিত বয়স অপেক্ষা কম এবং যিনি কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন এবং জিগ জ্যাগ টেস্ট, র্যাম্প টেস্ট, রোড টেস্ট, এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে লাইসেন্সিং কর্তৃপÿ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে।
আরো উলেøখ করে যে, মধ্যম ও ভারী যানবাহনের লাইসেন্স পেতে হলে অবশ্যই আবেদনকারীর হালকা মটরযানের লাইসেন্স থাকতে হবে এবং তিন বছর পার না হলে উক্ত প্রকার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যাবে না। রোড সাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিক চিহ্ন, ট্রাফিক নিয়মাবলী বা¯Íবে চিহ্নিত করতে হবে এবং মটরযান ও মটরযানের ইঞ্জিন সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে। তদুপরি বয়স ও শারীরিক দিক হতে উপযুক্ত বিষয়ে মৌখিক পরীক্ষয় প্রশ্নে পাশ করতে হবে। পরীক্ষার্থী মটরযানের যে শ্রেণির জন্য লাইসেন্স পেতে চায় সেই শ্রেণির গাড়ি দিয়েই মাঠে প্রাকটিক্যাল টেস্ট দিতে হয়। এ প্রাকটিক্যাল টেস্টে ইঞ্জিন চালু করা, গিয়ার পরিবর্তন করা, সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করা, গাড়ি থামানো, সামনে অগ্রসর হওয়া ও পিছনের দিকে সুষ্ঠুভাবে চালাতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা ১ম ধাপ হচ্ছে জিগজাগ টেস্ট। মাঠে যে আঁকা বাকা রা¯Íা মার্কিং করা থাকে তার ভিতর দিয়ে গাড়ি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার নাম জিগজাগ টেস্ট।
অথচ এসবের কিছুই ধার ধারছেনা এই সেক্টরের শ্রমিক মালিক কেউ। তাই সুশিল সমাজের আবেদন এই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত থেকে শিশুদের সরিয়ে পূর্ণবাসনের ব্যাবস্থা করে সাধারণ যাত্রীদের ঝুকি মুক্ত করে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক যোগ্য ড্রাইভারদের পরীÿার নিরাÿার মাধ্যে গাড়ি চলালোর অনুমোতি দিলে অনেক আংশে ঝুকি কমে আসবে। অত্রতত্র সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে না। বেঁেচ যাবে হাজারো প্রাণ ও পরিবার।