আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। রক্তগঙ্গা পাড়ি দিয়ে লাল-সবুজের পতাকা উড়ানোর দিন আজ। আজকের এই দিনেই বাঙালি শপথ নিয়েছিল প্রতিরোধের, শপথ নিয়েছিল প্রতিশোধের। হাজার বছরের বঞ্চনা আর নীপিড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মাহেন্দ্রক্ষণ ছিল মার্চের এই দিনেই। বাঙালির স্বাধীনতার সূর্য অস্ত গিয়েছিল পলাশীর প্রান্তরে। সেই সূর্য উদীত হয় ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। ২৫ মার্চের গণহত্যায় শহীদ হাজার মানুষের রক্ত ছুঁয়ে বাঙালি পরের দিনই ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলা মাকে মুক্ত করতে। স্বাধীনতার তরে বাঙালি ঝঁপিয়ে পড়েন ইতিহাসের মহানায়কের ডাকে।
আজ থেকে ৪৫ বছর আগে আজকের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ঘোরতর ওই অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল একাত্তরের আজকের এই দিনে।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন। ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫শে মার্চ কালোরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায়।
ওই দিন মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজিতে ঘোষণা করা সেই স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ হলো, “এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।”
অবশ্য এর আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ডাক দিয়েছিলেন। ৭ মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেন।
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলার আকাশে উদীত হয় নতুন সূর্য। বাঙালি পায় স্বাধীনতা। পায় লাল-সবুজ পতাকার মালিকানা।
সাড়ে চার দশক পর এবারের স্বাধীনতা দিবস বিশেষ আবেদন নিয়ে এসেছে। স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্বা আজ উন্নতশিরে দাঁড়িয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোতে উড়বে জাতীয় পতাকা। সকালে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমত নির্বিশেষে সেখানে হাজির হবে লাখো মানুষ।
রোববার ভোর ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণের পরই সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন আজ। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।