এক রানের আফসোস

Slider খেলা

2016_03_23_21_53_14_hnbj62o2Tjl75Y01f5ieQO1sSfstf0_original

 

 

 

 

 

ঢাকা: শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। হার্দিক পান্ডের প্রথম বল ডিপ কভারে ঠেলে দিয়ে ১ রান নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। স্ট্রাইকে আসেন মুশফিকুর রহিম। এক্সট্রা কভার অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান মুশফিক। পরের বলটাও স্কুপে বাউন্ডারি পার করান তিনি। ৩ বলে দরকার তখন ২ রান। জয় প্রায় হাতের মুঠোয়। চতুর্থ বলে শিখর ধাওয়ানের তালুবন্দী হন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক। পান্ডের চালাকিটা বুঝতে পারেননি মাহমুদুল্লাহও। ওভারের পঞ্চম বলটি ফুলটস দেন ভারতীয় বোলার। উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ ধরা পড়লেন রবিন্দ্র জাদেজার হাতে।

এবার হ্যাটট্রিক করার দ্বারপ্রান্তে পাণ্ডে। আর টাইগারদের জিততে হলে দরকার ১ বলে দুই রান। এক রান নিলেও ওই সময় হারে না বাংলাদেশ! ম্যাচ গড়াত সুপার ওভারে। শেষ বলটি মোকাবিলা করার সুযোগ পান শুভাগত হোম। ব্যাটে বলে এক করতে না পারায় দৌড়ে রান নেয়ার চেষ্টা করেন মুস্তাফিজুর রহমান ও শুভাগত। বল চলে যায় ধোনির কাছে। মুহূর্তেই দৌড়ে এসে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন ধোনি। মুস্তাফিজ রানআউট। এক রানের হার বাংলাদেশের। আফসোস, আক্ষেপ, হতাশা তখন ছেয়ে ধরেছে মাশরাফিদের। গোটা বাংলাদেশও তখন স্তব্ধ।

বুধবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে আফসোসের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাশরাফি বাহিনী। পাকিস্তানের কাছে মাত্র দুই রানের হারে কেঁদেছিল গোটা বাংলাদেশ। ভারতের কাছে ১ রানের হারে ফিরে এল সেই স্মৃতি। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রান তুলে ভারত। জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪৫ রানে।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আশিষ নেহরার প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। কিন্তু বাউন্ডারি হবে কি হবে না, তা নিয়ে ছিলেন শঙ্কায়। তাই অপর ওপেনার মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে জায়গা বদল করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে উইকেটের মাঝখানে আসতেই বোলার নেহরার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তামিম। মাথায় আঘাত লাগায় অনেকক্ষণ শুয়ে থাকেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। শুশ্রূষার পর ফের ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। ওই ওভারের পঞ্চম বলেই আউট হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তামিম। নিজের বলে নিজে ক্যাচ নিতে পারেননি নেহরা। বেঁচে গেলেন তামিম!

দলীয় ১১ রানের মাথায় বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভারতের স্পিনারের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে হার্দিক পান্ডের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৩ বল খেলে ১ রান করেই সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। তামিমের সঙ্গে পরিবর্তিত ওপেনিং জুটিতে এসে এ কী করলেন মিঠুন? পারলেন না নামের প্রতি সুবিচার করতে।

পঞ্চম ওভারে ফের জীবন পান তামিম। অশ্বিনের বল শুন্যে ভাসিয়ে দেন তিনি। ক্যাচটি লুফে নিতে ব্যর্থ হন জসপ্রীত বুমরাহ। তবে দুইবার জীবন পেয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারলেন না তামিম। রবিন্দ্র জাদেজার বলে ধোনির কাছে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন বাংলাদেশের সেরা এই ওপেনার। বিদায়ের আগে ৩২ বলে পাঁচটি চারে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান।

ভালোই খেলছিলেন সাব্বির রহমান রুম্মান। কিন্তু সামান্য ভুলেই শেষ হয়ে গেল তার পথচলা। ভারতের পার্টটাইম বোলার সুরেশ রায়নার বলে শট নেন সাব্বির। কিন্তু ব্যাটে বলে ঠিকমতো হয়নি তার। একটা পা ভেতরেই ছিল, কিন্তু একটা সেকেন্ডের জন্য মাটি থেকে তার ওপরে উঠে যায়। ওই সময়েই স্টাম্প ভেঙে দিলেন ধোনি। মুখ ভার করে সাব্বির বেছে নিলেন সাব্বির। ১৫ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ২৬ রান করেন তিনি।

সাব্বিরের বিদায় পর ব্যাট হাতে নেমে পড়েন অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু দ্রুতই ক্রিজ ছাড়লেন তিনি। জাদেজার বল খেলতে গিয়ে সামনে এগিয়ে আসেন। কিন্তু বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন টাইগার দলপতি। পাঁচ বলে ৬ রানেই বিদায় নেন তিনি। আশা জাগিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানও। কিন্তু ২২ রানেই থামে তার ইনিংস। হার্দিক পান্ডের বলে সুরেশ রায়নার হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ১৫ বলে দুটি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি।

এ যাত্রায়ও পারলেন না মাহমুদুল্লাহ। ফিরিয়ে আনলেন ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনাল।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বেশ সাবলিল ঢঙে ব্যাট করতে থাকেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। রানের চাকাও দ্রুত ঘুরতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে দুটি ছক্কার মার খেলেও শেষ বলে সাজঘরে ফেরত পাঠান রোহিত শর্মাকে। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সাব্বিরের হাতে তালুবন্দী হন রোহিত। তিনি করেন ১৬ বলে ১৮ রান। ভারতের দলীয় রান তখন ৪২। সপ্তম ওভারে আবারো বাংলাদেশ শিবিরে উল্লাস। এবার সাকিব আল হাসান। সপ্তম ওভারের শেষ বলে ভারতের আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিছুই করার ছিল না ধাওয়ানের। পুরোপুরি পরাস্ত। সাজঘরে ফেরার আগে ধাওয়ান করে যান ২২ বলে ২৩ রান। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার ও একটি ছক্কার মার।

আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়ের নায়ক বিরাট কোহলি জ্বলে উঠতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভারতের এই পোস্টারবয়কে বেশিদূর এগোতে দিলেন না শুভাগত। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে কোহলিকে সরাসরি বোল্ড করেন বাংলাদেশের এই স্পিনার। ২৪ বলে একটি ছক্কায় ২৪ রান করেন কোহলি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিল সুরেশ রায়না ও হার্দিক পাণ্ডে। তবে ১৬তম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে এই দুজনকে বিদায় করেন বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সুরেশ রায়না। ২৩ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ৩০ রান করে ফেরেন রায়না। এরপর আল আমিনের দ্বিতীয় বলেই আউট হার্দিক পাণ্ডে। দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন আবারো সৌম্য সরকার। পুল শট খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সৌম্যের হাতে ধরা পড়েন পান্ডে। সাত বলে দুই চার ও এক ছয়ে ১৫ রান করেন ভারতের এই অলরাউন্ডার। ভারতের দলীয় রান তখন ১১২।

শেষের দিকে ঝড় তুলতে পারেন যুবরাজ। এমন শঙ্কা ছিল। তবে বাংলাদেশ শিবিরে এর কিছুক্ষণ পরই স্বস্তি এনে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দলীয় ১১৭ রানের মাথায় যুবরাজকে আল আমিনের হাতে ক্যাচ বানান রিয়াদ। ৬ বলে মাত্র ৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন ভারতীয় এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে জাদেজাকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৮ বলে ১২ রান করেন জাদেজা। শেষ পর্যন্ত ধোনি ও অশ্বিন অপরাজিত থাকলে খুব বেশি রান করতে পারেননি তারা। ধোনি ১২ বলে ১৩ ও অশ্বিন ২ বলে ৫ রান করেন।

বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে দখলে নেন দুই উইকেট। আল-আমিন হোসেনও নিয়েছেন দুটি উইকেট। তবে ৪ ওভারে তিনি খরচ করেছেন ৩৭ রান। ১ ওভারে চার রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, শুভাগত হোমও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *