ওসমেনা এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনায় একজন মূল পরিকল্পনাকারী আছে। মনে হচ্ছে, সেই ব্যক্তি কিম অং। সে-ই (অং) এখানে বড় খেলোয়াড়। দেগুইতো কেন অংয়ের কথায় অ্যাকাউন্ট খুললেন জানতে চাইলে ওসমেনা বলেন, ‘তারা একে অন্যকে চিনতেন। মাইডাস নামে এক হোটেলে তারা বৈঠক করেন এবং ওই পাঁচটি হিসাবের বিপরীতে প্রয়োজনীয় তথ্য দেন অং। অ্যাকাউন্টগুলোর পরিচয়দানকারী অং নিজেই।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আরসিবিসি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন ঠিকমতো অনুসরণ করলে পাচার হওয়া ওই অর্থ আটকানো যেত। ঘটনা জানার পর পরই বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ ফেব্রুয়ারি এসব পেমেন্ট স্থগিত করতে আরসিবিসিকে অনুরোধ জানায়। আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে শাখা ব্যবস্থাপক ইচ্ছা করলে ওই তহবিল আটকাতে পারতেন। কিন্তু তারা তা না করে চুরির অর্থ অন্য জায়গায় স্থানান্তরে সহায়তা করেছেন।
ইনকোয়েরারের রিপোর্ট অনুযায়ী, যে চারজনের অ্যাকাউন্টে পাচার করা টাকা ঢোকে তারা সবাই ৫০০ ডলার করে জমা রাখে আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে। একই সঙ্গে আরেকটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যাতে বাংলাদেশের চুরির অর্থ জমা হয়নি। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই পাঁচ অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেন হয়নি। এসব অ্যাকাউন্ট মূলত ভুয়া। হিসাবধারীদের ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
সিন্ডিকেটের কাজ: শুনানিতে দেগুইতোর দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী, আরসিবিসির আরও দুই কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত হতে পারেন। আরেক সিনেটর টেওফিস্তো গুইনগোনা এমনটি বলেছেন। তার মতে, এ ঘটনায় অবশ্যই একাধিক ব্যক্তি জড়িত। এটা অবশ্যই একটা সিন্ডিকেটের কাজ। কারও একার পক্ষে এ অপরাধ সম্ভব নয়।
শাখা ব্যবস্থাপক দেগুইতো শুনানিতে বলেছেন, ৮১ মিলিয়ন ডলার তার শাখার ব্যাংক হিসাবে জমার আগে ব্যাংকের ট্রেজারি ও সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া পার হয়ে আসে। দেগুইতো শুনানির সময় কেমন আচরণ করেছিলেন জানতে চাইলে ওসমেনা বলেন, তাকে শান্ত দেখাচ্ছিল এবং সব প্রশ্নের উত্তরও দেন। তিনি হুমকি পেয়েছিলেন এবং তা পাত্তা দেন না বলেও সিনেটকে জানিয়েছেন দেগুইতো।
দেগুইতোর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর মামলা: ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো দেগুইতোর বিরুদ্ধে গত শুক্রবার মামলা দায়ের করেছেন। গোর দাবি, ভুয়া ডকুমেন্টের ভিত্তিতে তার নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক। ভুয়া স্বাক্ষরের মাধ্যমে সেখান থেকে দুই কোটি পেসোও উত্তোলন করা হয়। আরসিবিসিরি তথ্য অনুযায়ী, চার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া অর্থ উত্তোলনের পর ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার উইলিয়াম গোর হিসাবে জমা হয় এবং সেখান থেকে রেমিট্যান্স কোম্পানি ফিলরেমের অ্যাকাউন্টে যায়। ফিলরেম থেকে স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংক হিসাবে চলে যায়। ওই অর্থের বড় অংশ চলে যায় ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার বোর্ডে। সেখান থেকে এ অর্থ কোথায় গেল, তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দেগুইতোর আইনজীবী ফার্দিনান্দ টোপাসিও দেশটির মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কাউন্সিলের (এএমএলসি) তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, এএমএলসি অনেক কিছুই গোপন করছে।
মাকাতি শহরে জুপিটার স্ট্রিটে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক দেগুইতো ওই শাখায় সন্দেহভাজন পাঁচ নাগরিকের হিসাব খোলেন গত বছরের মে মাসে। হিসাব খোলা এবং সেখানে বড় অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর-সংক্রান্ত কাজে তিনি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেননি বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত হিসাবধারীদের ব্যাংক হিসাব খোলার সময় গ্রাহকের পরিচিতি ভালোভাবে জানা-সংক্রান্ত নিয়ম মানেননি তিনি। দেগুইতোর কাছে আরসিবিসির প্রধান কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে এসব বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এর জবাবে তিনি বলেছেন, ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) নির্দেশক্রমে তিনি ওই ৮১ মিলিয়ন ডলার চার ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর করেন।