সম্পাদকীয়: লাশ না ভোট চাই

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি বাধ ভাঙ্গা মত সম্পাদকীয় সারাদেশ

DSC02712

 

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইন চীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা:  হঠাৎ রুদ্র হঠাৎ বৃষ্টি। হঠাৎ ঝড় প্রচন্ড বেগে। সব লন্ডভন্ড। আবার একটু পর-ই আকাশ পরিস্কার। সব ঠান্ডা। তবে এরি মাঝে ক্ষতি হয়ে যায় দেশ ও জাতির। এই ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে আকাশে মেঘ জমে। দিনের আলোকে হঠিয়ে দিনকে হঠাৎ রাত করে ফেলা হয়। এই ধরণের ঘটনার আগে ঈশান কোলে কাল মেঘ জমতে থাকে । সকালের রৌদ্র বা দুুপুরের খরতার মাঝেও আকাশে কাল মেঘ জমতে থাকে।

কিছুদিন পূর্বে ফজরের নামাজের  আগে ভূমিকম্প হয়ে গেলে। আকস্মিক ওই ভূমিকম্পে যারা জেগে উঠেছেন তাদের মধ্যে কেউ উপাসনা করেন নি, তা ভাবা মুশকিল। মানে মৃত্যুর ভয়ে উপাসনা করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। যে যে ধর্মের সে সে ধর্মের উোসনাই করেছেন।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। একটি বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশী হিসেবে গর্বিত। আমাদের গর্ব অটুট থাকবে যদি স্বাধীনতাকে সম্মান করতে ভুল না হয়। আমরা দূর্ভাগা জাতি এই কারণে যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর স্বাধীনতার স্থপতিকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসে স্বপরিবারে খুন হতে হয়েছে। এরপর মুক্তিযোদ্ধা আরেকজন রাষ্ট্রপতির কপালে একই পরিনতি হয়েছে। অতঃপর সামরিক শাসন স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্তির জন্য এরশাদকে হটিয়ে গনতন্ত্র আনা হল। ১৯৯১ সালে গনতান্ত্রিক নির্বাচন হল। ৯৬ সালে বেগম জিয়া জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকার  জন্য বিনা ভোটের সরকার আনলেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বিদ্রোহী হয়ে যাওয়ায় তিনি ক্ষমতাচ্যুত হলেন। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ ভালভাবেই ক্ষমতার রদবদল করল। ২০০৬ সালে আবার বেগম জিয়া কৌশলে পুনরায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করায় ঝামেলা বেড়ে গেল। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বিদ্রোহ করায় তিনি টিকতে পারলেন না। দুই বছর অন্ধকারে কাটার পর আওয়ামীলীগ এলো। ২০০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী আওয়ামীলীগ ১৯৯৬ সালে বেগম জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে একদলীয় একটি সরকার করল।

এ ছাড়া ক্ষমতার প্রয়োজনে রাজনৈতিক দল গুলো সৈরাচার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্যও করল। এসব ইহিতাস সকলের জানা। তবে একটি ইতিহাস আমাদের জানা নেই। তা হল, কোন সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে এমনভাবে পক্ষে আনার প্রক্রিয়াটা এই বারই নতুন। এরশাদ সরকার ভোট বাক্স ছিনিয়ে নিয়েছে কিন্তু প্রার্থী হতে বাঁধা দেয়নি। প্রার্থী ও ভোটার সমর্থকেরা আতঙ্কে থাকে নি। সবই সমর্থনহীন কথিত ভোট হয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গনতন্ত্র যখন অস্পষ্ট হয়ে যায় সরকার টিকে থাকার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর হয়ে যায়। ওই প্রক্রিয়ায় কিছুদিন যাওয়ার পর অধিক সুবিধা পেয়ে সুবিধাভোগীরা বিদ্রোহ করে। ফলে সরকার সরে যেতে বাধ্য হয়। মানে হল রাষ্ট্রের মালিক যখন মালিকানা হারাতে যায় তখনি কর্মচারীরা মোলা ঝুলিয়ে সরকারের পতন করে দেয়।

ইতিহাস বলে,  ক্ষমতার পালা বদলের প্রতিপদে লক্ষ্য করা গেছে যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বিদ্রোহ করলেই সরকারের পতন হয়। আর সরকার জনগনের সমর্থন ছাড়া থাকতে চাইলে কর্মচারী নির্ভর হয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। আর তখনই দেশে দুর্যোগ নেমে আসে।

গনমাধ্যমের খবরগুলো বিচার বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নমুনা বলে দিচ্ছে ঈশান কোলে কাল মেঘ জমতে শুরু করেছে। জাতীয় পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত জনগন ভোটাধিকার হারালে গনতন্ত্রের প্রতি আর আস্থা থাকবে না। সরকার যেমন আর জনগনের কাছে আসতে পারবে না প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও ওই সুযোগে মুলা ঝুলিয়ে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে অজনপ্রিয় করে তুলবে।

সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে অর্ধডজন ভোটার খুন হয়েছেন। ফলে তাদের আর ভোট দেয়া লাগবে না। এই সংখ্যা কমবে না বরং বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রথম জাতীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভোট আতঙ্কে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বলছে এই ধরণের নির্বাচন সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। ফলে দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আর আকাশেও মেঘ ঘন হচ্ছে।

সবশেষে আশংকা করা যায়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর সরকার জনগনের ভোট নেয়ার পরিবর্তে লাশ করে ফেললে ভোটাররা এমনিতেই কেন্দ্রে যাবে না। এতে জনগন তাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা নিয়ে শংকিত হবে। ফলে ভোট অনুষ্ঠান এনালগ হয়ে গিয়ে সরকারকে বিপদে ফেলে দিবে। আর সরকার বেশী করে প্রজাতন্ত্র নির্ভর হওয়ায় ঘুর্নিঝড়ের আশংকাও বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *