বাংলাদেশ সফরে এসে টাইগারদের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে হারের পর এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও হেরেছিল পাকিস্তান। তবে, বিশ্বমঞ্চে সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের বিপক্ষে টানা তৃতীয় হারের লজ্জা এড়ালো ৫৫ রানের জয় পাওয়া শহীদ আফ্রিদির পাকিস্তান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের বিপক্ষে সুপার টেনে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের দলপতি শহীদ আফ্রিদি। ব্যাটিংয়ে নেমে আহমেদ শেহজাদ, মোহাম্মদ হাফিজ আর শহীদ আফ্রিদির ব্যাটে ভর করে পাকিস্তান ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ২০২ রান। জবাবে, নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে।
টস জিতে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন আহমেদ শেহজাদ ও শারজিল খান। টাইগারদের হয়ে বোলিং শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। তবে শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। তাসকিনের প্রথম ওভারে ৭ রান তুলে নিলেও পাকিস্তানের দুই ওপেনার আল আমিনের করা দ্বিতীয় ওভার থেকে তুলে নেন আরও ১৮ রান।
তৃতীয় ওভারে বোলিং আক্রমণে আসেন আরাফাত সানি। ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারেই আরাফাত সানি ফিরিয়ে দেন ১০ বলে ১৮ রান করা শারজিল খানকে। বোল্ড হয়ে ফেরেন পাকিস্তানের এই ওপেনার।
পাওয়ার প্লে’তে (প্রথম ৬ ওভার) পাকিস্তান একটি উইকেট হারিয়ে তোলে ৫৫ রান।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বোলিং আক্রমণে এসে শারজিল খানকে ফেরান আরাফাত সানি। দলীয় ২৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তানের রানের চাকা ঘোরান মোহাম্মদ হাফিজ ও আহমেদ শেহজাদ। এই জুটি থেকে পাকিস্তান আরও ৯৫ রান যোগ করে। তবে, ইনিংসের ১৪তম ওভারে সাব্বির রহমান ফিরিয়ে দেন অর্ধশতক হাঁকানো আহমেদ শেহজাদকে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়ার আগে ৩৯ বলে ৮টি চারের সাহায্যে শেহজাদ করেন ৫২ রান।
ইনিংসের ১৭তম ওভারে সানি ফেরান মোহাম্মদ হাফিজকে। বাউন্ডারি লাইনে অসাধারণ ক্যাচ লুফে নেন সৌম্য সরকার। ৪২ বলে ৭টি চার আর দুটি ছক্কায় ৬৪ রান করেন হাফিজ। বিদায় নেওয়ার আগে হাফিজ পাকিস্তান দলপতি আফ্রিদিকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ১৭ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন।
১৮তম ওভারে তাসকিনের বলে বিদায় নেন উমর আকমল। সাকিবের তালুবন্দি হন আকমল।
চার বছর পর আফ্রিদি অর্ধশতকের দেখা পেতে গিয়েও বঞ্চিত হন। ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ অর্ধশতক হাঁকানো আফ্রিদি ১৯ বলে চারটি চার আর চারটি ছক্কায় করেন ৪৯ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে তাসকিনের বলে স্কয়ার লেগে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়েন আফ্রিদি। শোয়েব মালিক ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
এ ম্যাচে বাংলাদেশ দলে পেসার আবু হায়দার রনির জায়গায় দলে এসেছেন স্পিনার আরাফাত সানি।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি। একটি উইকেট তুলে নেন সাব্বির।
২০২ রানের টার্গেটে টাইগারদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই মোহাম্মদ আমির বোল্ড করেন সৌম্য সরকারকে।
ওপেনার সৌম্য সরকার দ্রুত বিদায় নিলেও উইকেটে থেকে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন বিশ্বমঞ্চের শুরু থেকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা তামিম ও সাব্বির। তবে, ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আফ্রিদির বলে বোল্ড হন সাব্বির। ১৯ বলে পাঁচটি বাউন্ডারি হাঁকানো সাব্বির করেন ২৫ রান। বিদায় নেওয়ার আগে তামিমের সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়েন সাব্বির।
এরপর ফেরেন তামিম ইকবাল। ইনিংসের অষ্টম ওভারে আফ্রিদির করা শেষ বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বিদায় নেন ২০ বলে দুটি ছক্কায় ২৪ রান করা তামিম। ১১তম ওভারে বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইমাদ ওয়াসিমের বলে শারজিল খানের তালুবন্দি হন ৪ রান করা রিয়াদ।
রিয়াদের বিদায়ের পর জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। ইনিংসের ১৭তম ওভারে মোহাম্মদ আমিরের দ্বিতীয় শিকারে বিদায় নেন মুশফিক। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে ২১ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে আসে ১৮ রান। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক।
১৮তম ওভারে ফেরেন মিঠুন। মোহাম্মদ ইরফানের বলে আমিরের তালুবন্দি হন ২ রান করা মিঠুন।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এক হাজারি রানের ক্লাবে প্রবেশ করে সাকিব অপরাজিত থাকেন। ৪০ বলে ৫টি চার আর একটি ছক্কায় সাকিব করেন ৫০ রান। ক্রিকেট বিশ্বে আফ্রিদির পরেই ৫০’র উপরে উইকেট আর হাজার রান সংগ্রহকারী ক্রিকেটার হিসেবে নাম লেখান সাকিব।
মাশরাফি ৯ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, আল-আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল ও তাসকিন আহমেদ।
পাকিস্তান একাদশ: শহিদ আফ্রিদি (অধিনায়ক), আহমেদ শেহজাদ, ইমাদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ ইরফান, সরফরাজ আহমেদ, শারজিল খান, শোয়েব মালিক, উমর আকমল ও ওয়াহাব রিয়াজ।