প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেমের আপিল পুনঃশুনানির দাবি

Slider বাংলার আদালত
mir-quasem-ali-jamaat-e-isl_197699
গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন করে মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানির দাবি তুলেছেন। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতিকে তার আসনে থাকতে চাইলে ‘অতিকথন’ বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।

 

জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ের নির্ধারিত দিনের দু’দিন আগে গতকাল শনিবার ধানমণ্ডির বিলিয়া মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র :সরকার, বিচার বিভাগ ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

যোগাযোগ করা হলে এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, মামলার শুনানি শেষ হয়ে গেছে। এখন রায় ঘোষণা হবে। এই মুহূর্তে কারও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃশুনানি করা সঠিক হবে না। কারণ, সর্বোচ্চ আদালতের সাজা অপছন্দ হলে যে কোনো পক্ষ রিভিউ আবেদন করতে পারেন। পুনঃশুনানির কোনো নজির নেই বলে উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী। জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সমকালকে বলেন, এ ধরনের বক্তব্য ‘কমেন্টের অযোগ্য’।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে হত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জেলা আলবদর কমান্ডার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই সাজা বাতিল চেয়ে আপিল করেন এই জামায়াত নেতা।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। আগামী ৮ মার্চ রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আপিলের শেষ দিনে প্রধান বিচারপতি শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘এ মামলা আপনারা কোনো রকম দায়সারাভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এটি দুঃখজনক। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরকে এনে আসামির সঙ্গে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।’

এর আগের দিন যুক্তি উপস্থাপনের এক পর্যায়ে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার কাজে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাষ্ট্র লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ করেছে। কিন্তু তারা মামলা পরিচালনায় দক্ষতা ও নিষ্ঠা দেখাতে পারেননি। বরং সাক্ষী হাজির করার পর তারা শুধু গণমাধ্যমের সামনে চলে আসেন। প্রসিকিউশন বসে বসে এসব নিয়ে শুধু রাজনীতি করছেন।’ এরপরই মীর কাসেমকে রক্ষার চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চ।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কার্যকরী কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের পরিচালনায় গতকালের গোলটেবিল আলোচনায় আরও অংশ নেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুল হুদা, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য মফিদুল হক, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও ড. তুরিন আফরোজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় প্রমুখ।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এই (মীর কাসেম আলী) মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্য আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। এই মামলায় আর মৃত্যুদ ের রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতে বলেছেন- প্রসিকিউশন মামলা নিয়ে রাজনীতি করছে। এর অর্থ হলো, সরকার রাজনীতি করছে। বিচার নিয়ে জামায়াত ও বিএনপি যে অভিযোগ করে আসছে তাদের আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপ যে সুরে কথা বলছে, একই সুরে কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি।

কামরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রসিকিউশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানেই প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এই বক্তব্যে ট্রাইব্যুনালের পাঁচ বছরের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও হত্যা করা হয়েছে। জামায়াত-বিএনপির অভিযোগকে তিনি প্রমাণ করে দিলেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব, রাষ্ট্রপক্ষের মামলা সঠিকভাবে পরিচালনা করা। তিনিও প্রধান বিচারপতির সুরেই কথা বলছেন।’ অ্যাটর্নি জেনারেলকেও এই মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখা উচিত। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতির অতিকথনে সরকার বিব্রত হচ্ছে। তার অতিকথনে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করব, আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিন। নইলে এ পদে থাকার কতটুকু সুযোগ আছে, বিচারের ভার তার ওপরই সেটা রাখতে চাই।’ বিচারপতিরা আইনের ঊধর্ে্ব নন এবং আইনের চেয়ে কারও হাত বড় নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, তিনি বিচার বিভাগকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন, জানি না। তিনি বলেন, তিনি যদি এখন প্রধান বিচারপতির জায়গায় থাকতেন, তাহলে নিজেকে ওই মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নিতেন। মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও একাত্তরে নির্যাতিতদের সম্মান দেখাতে হবে। আমাদের বিচারব্যবস্থা নিয়ে একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে গোলটেবিল আলোচনা সভার ধারণাপত্র পাঠ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। আলোচনায় অন্যান্য বক্তা বলেন, বিচার বিভাগের মর্যাদাহানি হয় এমন কিছু বলা কারোরই উচিত নয়। –

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *