গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে কিছু সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। রক্তের বন্যা বয়ে যায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। তবে দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া শোকাবহ এই দিনটি পালনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেতার, টিভিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংবাদমাধ্যম বিশেষ ক্রোড়পত্রসহ নানা নিবন্ধ প্রকাশ করছে। আজ সরকারি ছুটি।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কেবল বাঙালির ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু একজন রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করা নয়, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা এবং পরাজিত শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তবে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হলেও ২০১০ সালে নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। জাতি আজ অনেকটা কলঙ্কমুক্ত। যেসব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঘাতক আজো বিদেশে পালিয়ে রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাতে হবে। বাণীতে তিনি বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
পৃথক বাণীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনের সব শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ বাঙালি জাতির অন্তরে গ্রোথিত হয়ে আছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্থাগুলোর নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের আজকের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল পৌনে ৭টায় ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর প্রাঙ্গণে রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের মুনাজাত ও শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মুনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ নেতা উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়া থাকবে বাদ জুমা দেশের সব মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা, দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ, বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
আগামীকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী আজ বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
সরকারি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায় আসবেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কমপ্লেক্স হেলিপ্যাডে পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর মাজারে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মুনাজাতে অংশ নেবেন।
অনুষ্ঠানস্থলে তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করবেন।
শেখ হাসিনা মাজার প্রাঙ্গণে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান শেষে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
রওশন এরশাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার সদস্যদের ৩৯তম শাহাদতবার্ষিকীতে শোক ও গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
গতকাল এক বার্তায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ ঘটনা কেবল বাঙালির ইতিহাসে নয় বরং পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। তিনি বলেন, ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ বঙ্গবন্ধুকে তার প্রিয় বাংলাদেশ কিংবা বাঙালি জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। বরং দিনে দিনে বিশাল থেকে বিশালতর হয়ে তিনি বিশ্বমানবতার পথপ্রদর্শক হয়ে আছেন। বেগম রওশন ১৫ আগস্টে শাহাদতবরণকারী সব শহীদদের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সাথে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানান।