খালেদা-তারেকই থাকছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে

Slider রাজনীতি

 

2015_09_14_14_39_52_pVM80WFUHpL68CxSlCm1pKdKrJdNWX_original

 

 

 

 

ঢাকা : দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনুমানই শেষ পর্যন্ত সত্যি প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। আগামী তিন বছরের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে যথাক্রমে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছে যাচ্ছেন। তবে এজন্য তাদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন অর্থাৎ ৬ মার্চ বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বুধবার বিকেল ৪টায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের নির্ধারিত সময় শেষ হলেও বিএনপির শীর্ষ ওই দুই পদে নির্বাচনের জন্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া দলের অন্য আর কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি কিংবা সংগ্রহ করতে আসেননি। মনোনয়নপত্র ছিল ‘অমূল্য’ অর্থাৎ এর কোনো দাম নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, নির্বাচনী সব প্রক্রিয়া শেষে ওই দুই পদে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম ঘোষণা করা হবে।

বিকেল ৪টায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় শেষ হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওই নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মিডিয়ার ক্যামেরার নিচে থেকে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণের কাজ সম্পন্ন করেছি। দুই পদে মাত্র দুইজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ওই দুই পদে আরও কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে কি-না, সেজন্য আমরা নির্ধারিত সময় (বিকেল ৪টা) পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আর কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই দুই পদে আর কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করলেও এখনই তাদেরকে নির্বাচিত বলা যাবে না। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমাদান, বাছাই ও প্রত্যাহার করার ব্যাপার রয়েছে। সেজন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন (৬ মার্চ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা রিপোর্ট দেবো।’

বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। কিন্তু দলের অন্য কেউ ওই দুই পদে কেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করল না?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কে মনোনয়নপত্র নিতে চায়, সেটাই তো জানি না। জানলে তো তার সঙ্গে আগেই আলোচনা করতাম, কেন তিনি মনোনয়নপত্র নিলেন না?’

এদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচন পরিচালনা কমিশন-২০১৬ গঠন করা হয়। তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটিতে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমিনুল হককে সদস্য সচিব এবং ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদকে সদস্য করা হয়।

নির্বাচন পরিচালনা কমিশন ওই দুই পদে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে রিটার্নিং অফিসার এবং দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নানকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে।

এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে দলীয় নির্বাচন কমিশন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ওই দুই পদে নির্বাচনের জন্য বুধবার (২ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা বিকেল ৪টায় শেষ হয়।

এদিন বিএনপির চেয়ারপারসন পদে নির্বাচনের জন্য বেলা পৌনে ১১টায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তার নির্বাচনী এজেন্ট দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এর আগে, চেয়ারপারসনের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে রুহুল কবির রিজভীকে লিখিতভাবে মনোনীত করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদান, প্রত্যাহার এবং ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন।

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য বিকেল সাড়ে ৩টায় তারেক রহমানের পক্ষে তার নির্বাচনী এজেন্ট দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এসময় মো. শাহজাহানের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন- রুহুল কবির রিজভী, দলের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন ও তাইফুল ইসলাম টিপু।

এর আগে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে মো. শাহজাহানকে লিখিতভাবে মনোনীত করেন তারেক রহমান। তিনি তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদান, প্রত্যাহার এবং ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৪ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনা কমিশনের অস্থায়ী অফিসে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে।

৫ মার্চ শনিবার বেলা ১১টায় কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে মনোনায়নপত্র বাছাই করা হবে। এছাড়া ৬ মার্চ রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনায়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।

গত ২৩ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নীতিনির্ধারকদের সর্বসম্মত সুপারিশের ভিত্তিতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ পদে নির্বাচনের বিধান রেখে গঠনতন্ত্রের সংশোধন অনুমোদন করেন। পরবর্তীতে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধনের এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সাল থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন পদের দায়িত্বে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলেও তাকেই নেতৃত্বের আসনে রাখা হয়।

এদিকে, কয়েক ডজন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে গত আট বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান সেখান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই কাউন্সিলে বক্তৃতা করেছিলেন। ওই কাউন্সিলে ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ নামে দলে নতুন একটি পদ সৃষ্টি করা হয়। সেখানে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে তারেক রহমান ওই পদে নির্বাচিত হন। তবে দলের গঠনতন্ত্রে এতদিন ওই পদে ‘সরাসরি’ নির্বাচনের বিধান ছিল না।

উল্লেখ্য, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যান পদে আসেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। এরপর ১৯৮৪ সালে দলের ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন মনোনীত হন। সর্বশেষ কাউন্সিলেও তাকে চেয়ারপারসন নির্বাচিত করা হয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *