গ্রাম বাংলা ডেস্ক: দেশের বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, নাটোর ও মেহেরপুরে বজ্রপাতে মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে বগুড়ায় ২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জন, শেরপুরে ১ জন গাইবান্ধায় ১ জন, নাটোরে ২ জন ও মেহেপুরে ১ জন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১৪ জন।
বুধবার সকালে থেকে সারাদিনে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
বগুড়া: বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় পৃথক দু’টি স্থানে প্রায় একই সময়ে বজ্রপাতে শিশুসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। আর এতে আহত হয়েছেন আরো ৪ জন।
বুধবার বিকেল আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। আর নিহত ২ জনের মধ্যে একজন শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
জানা যায়, পরিচয় পাওয়া শিশুটির নাম তামান্না (১২)। সে উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবার নাম কামাল হোসেন।
আহতরা হলেন, উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের উত্তর পেচুল এলাকার বজলুর রশিদের মেয়ে ববি খাতুন (১৪), গাড়ীদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী এলাকার জাভেদ শেখের দুই সন্তান জাকারিয়া হোসেন (১২) ও শাপলা খাতুন (৮), একই এলাকার মৃত ফজলু প্রামাণিকের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম (১৬)।
এ ব্যাপারে শেরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বুধবার দুপুরে উপজেলার প্রায় সর্বত্রই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই সঙ্গে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। এসময় তামান্নাসহ কয়েকজন বাড়ির পাশে হাটাহাটি ও খেলাধুলা করছিল। সেসময় বজ্রপাত হলে তামান্না ও অজ্ঞাত এক নারীর মৃত্যু ও ববি, জাকারিয়া, শাপলা ও তৌহিদুল আহত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্র্রামে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে ২ যুবক মারা গেছেন। এসময় আরো আহত হয়েছেন আরো তিন যুবক।
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-ওই গ্র্রামের নূরু মিয়ার ছেলে শাহাবুদ্দিন মিয়া (২০) ও ভৈরবপুর এলাকার রকিব (১৮)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলছিলেন স্থানীয় একদল যুবক। এসময় বজ্রপাত হলে ৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন ও রকিবকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
শেরপুর: শেরপুরের নকলা উপজেলার গৌড়দার পূর্বপাড়া বিলে বজ্রপাতে মো. তুলা মিয়া (৪৫) নামে ১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃত তুলা মিয়া গৌড়দার গ্রামের আবদুল হালিমের ছেলে।
এ ঘটনায় লাল মিয়া নামে ১ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তিনি একই গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে। তাকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বিকেলে তুলা ও লাল মিয়া স্থানীয় গৌড়দার বিলে মাছ ধরতে যান। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তুলা মিয়ার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হন লাল মিয়া।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম হায়দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি এলাকায় বজ্রপাতে শফিক মিয়া (৩২) নামে ১ যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃত শফিক চর চরিতাবাড়ি গ্রামের আব্দুস সোবহান মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির বাইরে সাংসারিক কাজ করছিলেন শফিক। এসময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই শফিকের মৃত্যু হয়।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বিদ্যুৎ কুমার দেব শর্মা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর: নাটোরের লালপুর ও সিংড়া উপজেলায় বজ্রপাতে শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এরা হলেন- উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের মনিহারপুর গ্রামের হাসান আলীর ছেলে সেলিম (৮)। সে জ্যোতগৌরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং সিংড়া উপজেলার হাতিয়নদহ ইউনিয়নের শালিখা গ্রামের আহম্মদ আলী (৩৫)।
লালপুরের স্থানীয় উন্নয়ন কর্মী মোয়াজ্জেমে হোসেন জানান, স্কুল ছুটির পর সেলিম বাড়ি ফিরে উঠানে পৌঁছামাত্র বজ্রপাতের শিকার হয়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। এ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
অন্যদিকে, সিংড়া উপজেলার শালিখা গ্রামের আহম্মদ আলী মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সিংড়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনীর উপজেলার বিভিন্ন পল্লীতে পৃথক বজ্রপাতে সামসুজ্জামান ভদু (১৯) নামে ১ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন।
মৃত সামসুজ্জামান ভদু গাংনী উপজেলার কুঞ্জনগর গ্রামের সাবেক মেম্বর আবু তাহেরের ছেলে।
আহতরা হলেন- গাংনী উপজেলার গোপালনগর গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে জুশি (৯), চিৎলা গ্রামের গাজিউর রহমানের স্ত্রী জামিনা খাতুন (৩৬), একই গ্রামের শুকুর আলীর স্ত্রী মমেনা খাতুন (৩৫), হেমায়েতপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের মেয়ে সোহানী (৭), শিমুলতলা গ্রামের মৃতু রমজান আলীর ছেলে হায়াত আলী (৫০) ও চাঁদপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে কনিকা (১৯)।
আহতদের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চাঁদপুর গ্রামের কনিকা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ও হায়াত আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবুল বাশার।
নিহত সামসুজ্জামনের বাবা আবু তাহের জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সামসুজ্জামান বাড়ির পাশে খেলছিল। এসময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে তার শরীরের বিভিন্ন ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।