সৌদি থেকে আসছে ৪০০ কোটি টাকার ইউরিয়া

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

 

Uria_SM_927293889

 

 

 

 

ঢাকা: ধান, গমসহ প্রায় সব ফসলের ফলন নির্ভর করে ইউরিয়া সারের উপর। জমিতে নাইট্রোজেনের অভাব পূরণ করে এই সার। বর্তমানে ইউরিয়া সারের প্রয়োগ ছাড়া ফলন হয়না বললেই চলে।

ইউরিয়া সারের উৎপাদন বাংলাদেশে দিন দিন কমে যাচ্ছে। চাহিদা সামাল দিতে বেড়েছে আমদানি। সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ৪০০ কোটি (৫০ মিলিয়ন ডলার) টাকার ইউরিয়া সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সৌদি এক্সপোর্ট প্রোগ্রামের (এসইপি) আওতায় সৌদি আরব থেকে সার আমদানির এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সার আমদানির জন্য ৪০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তার জন্য সমঝোতা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ইউরিয়া সার আমদানির লক্ষ্যে সৌদি আরব ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে সৌদি আরব থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করতে হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এসইপি-এর ঋণ ১৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

সাধারণত সৌদি আরব ২ শতাংশ সুদে বাংলাদেশকে ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে এসইপি’র আওতায় সামান্য পরিমাণে বাড়তি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারে দাম পড়বে ১৯৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫ হাজার ৬০০ টাকা। এবারই প্রথম কম দামে ইউরিয়া সার আমদানি করছে সরকার। এর আগে প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারে ২৫০ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইআরডি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ইউরিয়া সার আমদানি করার লক্ষ্যে সৌদি আরব ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ১৩ মাসের মধ্যে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সাধারণ ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেয় সৌদি আরব। তবে এসইপি’র আওতায় সামান্য পরিমাণে সুদের হার বাড়তে পারে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সৌদি আরব থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করবে।

বিসিআইসি সূত্র জানায়, সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে সার আমদানি করা হয়।  বর্তমানে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে ইউরিয়া সার।

বিসিআইসি’র ডেপুটি সচিব মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করতে যাচ্ছি। এর আগে প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারে ৩০০ ডলার গুণতে হয়েছে। তবে তেলের দাম কমার কারণে এখন প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি দর মাত্র ১৯৫ মার্কিন ডলার।

বিসিআইসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ফেঞ্চুগঞ্জে স্থাপিত সার কারখানায় প্রথম ইউরিয়া উৎপন্ন হয় ১৯৬১ সালে। তারপর পর্যায়ক্রমে ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা, আশুগঞ্জ জিয়া সার কারখানা, পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার, যমুনা সার কোম্পানি লিমিটেড, তারাকান্দিতে এবং বেসরকারি উদ্যোগে কর্ণফুলী সার কোম্পানি স্থাপন করা হয়।

যমুনা সার কোম্পানি  এবং কর্ণফুলী সার কোম্পানিতে শুধু দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়, আর অন্য সার কারখানায় প্রিল্ড আকারে ইউরিয়া উৎপন্ন করা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল নামে আর একটি ইউরিয়া কারখানা স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। এ সার কারখানায় ৫ দশমিক ৬১ লাখ টন ইউরিয়া উৎপন্ন করা হবে।

বিসিআইসি সূত্র জানায়, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানাটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে। কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন।

ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড দেশের দ্বিতীয় ইউরিয়া সার কারখানা যা শীতলক্ষা নদীর তীরে ১৯৭০ সালে নরসিংদী জেলায় স্থাপিত হয়। এ ফ্যাক্টরির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানাটি বন্ধুত্বের চিহ্ন স্বরূপ চায়না-বাংলাদেশের একটি যৌথ উদ্যোগ। যা ১৯৮৫ সালে  শীতলক্ষা নদীর তীরে নরসিংদী জেলায় স্থাপিত হয়। এ কারখানাটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯৫ হাজার মেট্রিক টন।

ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড দেশের প্রথম এবং পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানা যা ১৯৬১ সালে ফেঞ্চুগঞ্জে স্থাপিত হয়। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন।

বিসিআইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৫ থেকে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র ১০ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ১৫ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন  ইউরিয়া সার মধ্যপ্রাচ্য থেমে আমাদানি করা হয়। তবে দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন সব সময় সমান থাকে না। কারণ সার কারখানাগুলোতে যথাযথভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা না হলে উৎপাদন অনেকাংশে কমে যায়। তবে শাহজালাল ইউরিয়া সার কারখানা চালু হলে প্রতিবছর সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টনের ওপরে ইউরিয়া সার উৎপাদিত হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে ইউরিয়া সারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যেসব রাসায়নিক সার ব্যবহার হয় তার শতকরা ৫৪ ভাগই ইউরিয়া সার। বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ টাকায় ক্রয় করে কেজি প্রতি ২৮-২৯ টাকা ভর্তুকি দিয়ে কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকায় বিক্রি করছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার সার বাবদ ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।

তবে সঠিকভাবে ইউরিয়া সার জমিতে প্রয়োগ না করার ফলে অপচয় বাড়ে। এতে করে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে ইউরিয়া সারের আমদানি। ইউরিয়া সার ব্যবহারে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও পদ্ধতির বিষয়ে সচেতন করা গেলে ব্যবহার অনেকাংশে কমে আসবে। এতে করে আমদানিও কম করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) পুলক রঞ্জন সাহা  বলেন, প্রতিবছর প্রায় ১৫ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি করতে হয়। তবে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে ইউরিয়া সার ব্যবহার অনেক সাশ্রয় হবে। এতে করে  দেশের অর্থেরও অপচয় কমে আসবে। পরিমিত ইউরিয়া সার ব্যবহার করার জন্য আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি যাতে করে ইউরিয়া কম আমদানি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *