নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আমি অনেক সত্য কথা বলতে গেলে বলা হয় সরকারের বিরুদ্ধে বলছি। আসলে সরকার তো আমরাই। আমাদের ভুল ত্রুটি নিজেরাই তুলে ধরি এবং আত্মসমালোচনা করি। এতে নিজেদের কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণে সেটাকে ভিন্নদিকে নিয়ে যায়। যদিও আমি তারপরও সত্য কথা বলি। জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের যে রূপরেখা দিয়েছেন সে রূপরেখা বাস্তবায়নে আমাদেরও কাজ করতে হবে। সেখানে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন- খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ অভিযানে আমাদের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নেই। যে কারণে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারি না। আর জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট দিলে আমরা সঙ্গে থাকবো। নিতাইগঞ্জে পচা গমের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জে ইতিবাচক ও নেতিবাচক সব কিছুই রয়েছে। এত সমস্যায় নিজেরাই ভীত হয়ে গেছি। এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কি হবে? নারায়ণগঞ্জে নতুন এসপি-ডিসি আসলে প্রথমে অনেক কাজ করেন। খুব ভালো কাজ করেন। কিন্তু কেন জানি তারা ধীরে ধীরে স্লো হয়ে যান। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে জনগণ সহযোগিতা করেনি। তাই কোনো কারণে হয়তো প্রশাসন স্লো হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জে ‘খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজন গণসচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এসব কথা বলেন। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াচ সোসাইটি এবং নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেয়া অতিথিবৃন্দ খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মতামত ব্যক্ত করেন। তবে জনসচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনের নজরদারির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে আজ থেকে ফরমালিন ও ভেজালমুক্ত মাছ পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা করলাম। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন সব সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকে। নারায়ণগঞ্জ শহরের বড় বড় রেস্তরাঁগুলো মনিটরিং করছে। দীর্ঘদিন মনিটরিং করে সেখানে পাচকদের পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টয়লেট থেকে ফিরে যেন হাত ভালো করে ধুয়ে নেয় সে বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। পশু জবাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বানানোর কাজ চলছে। আগে যেখানে ৮ হাজার টন ফরমালিন ব্যবহার হতো এখন সেখানে ১০০-১৫০ টন ফরমালিন ব্যবহৃত হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দীন বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের যখন প্রয়োজন হবে তখনই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সহযোগিতা করবে পুলিশ। কারণ পুলিশ সরাসরি খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে কাজ করতে পারবে না। এসবে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন কাজ করবে। সেখানে পুলিশ সহযোগিতা করতে পারবে। বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন রাজউকের পরিচালক (আইন) রোকন-উদ-দৌলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আ.ব.ম ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মহসীন হলের প্রভোস্ট ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাকিয়া পারভীন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ ক্যামিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচএম টুটুল, জেলা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি প্রমুখ।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক ও সঞ্চালনায় ছিলেন ওয়ার্ল্ড ওয়াচ সোসাইটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান।