বাহরাইন: বাহরাইনে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় মানামায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু ওইদিন ভোর হওয়ার আগ থেকেই প্রবাসীদের আগমনে দূতাবাস সংলগ্ন রাস্তায় ভিড় দেখা যায়।
সকাল ৮টায় দূতাবাস গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই একত্রে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেটে কর্তব্যরত সিকিউরিটিদের রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। পরে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনূর রহমান নিজে গেটে এসে সবাইকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করান।
লাইনে থাকা সিরাজগঞ্জের রবিউল (৪২) বাংলানিউজকে জানান, তিনি ৬ বছর আগে ৩ লাখ টাকা খরচ দিয়ে দালালালের মাধ্যমে বাহরাইনে এসেছেন। পরে দালাল ভিসা রিনিউয়ের কথা বলে তার পাসপোর্ট ও সিপিআর নিয়ে নিখোঁজ হন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কোনো কাজ না পেয়ে তিনি গাড়ি ধোয়া-মোছার কাজ করছেন। দেশে ফেরার জন্য সাধারণ ক্ষমার সময়েও তিনি চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ইতিমধ্যে মা, বাবা দু’জনকেই হারিয়েছেন। দূতাবাসের এ আহ্বানে এবার তিনি দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন।
হাতে সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বুড়িচংয়ের ফিরোজ (৩৭)। সৌদি আরবে নেওয়ার কথা বলে ট্রানজিট হিসেবে তাকে বাহরাইনে নামানো হয়। এখান থেকে বাসে সৌদি আরব পাঠানোর কথা থাকলেও বাহরাইনে নেমে তিনি কাউকে পাননি। সব হারিয়ে ৪ বছর ধরে এখানকার একটি বাগানে কাজ করছেন। বার বার দেশে ফেরার চেষ্টা করেও সফল হননি তিনি। তবে এবার দূতাবাসের ঘোষণা তার মনে দেশে ফেরার আশা জাগিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনূর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভিজিট (ভ্রমণ) ভিসা, জাল পাসপোর্ট (অন্যের পাসপোর্টের ছবি বদল করে আসা), ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার (প্রতারণার শিকার সৌদি আরবে গমনেচ্ছু) এবং যাদের কোনো কাগজপত্র নেই- এমন প্রবাসীরা দেশে ফেরার জন্য অনেক আগ থেকে চেষ্টা করছিলেন। সম্প্রতি ফরেন মিনিস্ট্রিতে এক কনফারেন্সে ইমিগ্রেশন, হিউম্যান রাইটস, বাহরাইনের শ্রম বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটির (এলএমআরএ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আমি তাদের ব্যপারটি বুঝিয়ে বলেছি। এরপর তাদের দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবারে প্রায় ১ হাজার আবেদনপত্র থেকে বাছাই করে ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার ৮৪ জন, ভিজিট ভিসার ৫৬ জন, জাল পাসপোর্টের ৩৬ জন, কোনো কাগজপত্র নেই এমন ৩৯ জন, সিপিআর ও পাসপোর্ট আছে কিন্তু ভিসা নেই এমন ৫০ জনসহ সব মিলিয়ে মোট ২৫৬ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। বাকিদের আগামী রোববার আসতে বলা হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে আবেদন গ্রহণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সবাইকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।