আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে ‘বড় আকারের’ কমিটি করতে যাচ্ছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, সমমর্যাদাসম্পন্ন উপকমিটি এবং দুটি উপদেষ্টা কাউন্সিল মিলিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা হবেন প্রায় ৭শ’ জন। বর্তমানে স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ কেন্দ্রীয় নেতা ৪৩৬ জন।
আগামী ১৯ মার্চ দীর্ঘ ছয় বছর পর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এত দীর্ঘ সময় পর দলের কাউন্সিল হওয়ার কারণে এবার পদহীন বহু নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দিতে হচ্ছে। ছাত্রদলসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাবেক নেতাদের সঙ্গে গত আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কিছু নেতাকেও পদে বসানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মতোই বিশালায়তন হতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, কাউন্সিলের মাধ্যমে এবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২১ করা হচ্ছে। দলের ২৫টি উপকমিটির প্রতিটিতে থাকছেন ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য। যার সদস্য হতে পারেন প্রায় ৫০০ জন। জাতীয় নির্বাহী কমিটির ২৬৫ সদস্যের মধ্য থেকে কমপক্ষে ১০০ জনকে এসব উপকমিটিতে রাখা হচ্ছে। দলের উপদেষ্টা কমিটিতে থাকতে পারেন ৩০ সদস্য। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটিতেও সমসংখ্যক সদস্য থাকতে পারেন।
এদিকে রাজনীতিতে কম সক্রিয় দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের স্থায়ী কমিটির সমমর্যাদা দিয়ে উপদেষ্টা কমিটিতে রাখার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটিতে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সদস্য রাখা হবে। এবার নতুন উপকমিটির সদস্যরা নির্বাহী কমিটির সমমর্যাদা ভোগ করবেন। উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে দলের সিনিয়র নেতাদের এবং সদস্য পদে ছাত্রদলসহ সহযোগী অন্য সংগঠনের সাবেক নেতাদের রাখা হচ্ছে। দল ক্ষমতায় থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজ পর্যবেক্ষণ করে সুপারিশমালা তৈরি করবে উপকমিটিগুলো। দল বিরোধী দলে থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ত্রুটি ও ব্যর্থতা তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার করবে। একই সঙ্গে ওইসব বিষয় দলীয় চেয়ারপারসনের কাছে নথি আকারে তুলে দেবে।
নেতারা আরও বলছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দলের আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকা নেতাদের নিয়েই কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতে পুলিশের ‘চরম’ আক্রমণাত্মক ভূমিকার কারণে বড় মাপের কোনো নেতাই তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ কারণে ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিত’ নেতা বাছাইয়ের কোনো মানদণ্ডই তেমন কাজে আসছে না। ফলে বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই শেষ পর্যন্ত টিকে যেতে পারেন। নিষ্ক্রিয় সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩২ নেতাকে কমিটি থেকেই বাদ দেওয়া হতে পারে।
এর আগে গত নভেম্বর থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সাবেক আমলাদের দুটি টিম বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশনার আলোকে দল ও গঠনতন্ত্রের ‘সময়োপযোগী’ পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু করে। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দু’মাসের লন্ডন সফর শেষে নভেম্বরের শেষ দিকে গঠনতন্ত্র ও নতুন কমিটির খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনায় এবং তাদের বিবেচিত ‘পরীক্ষিত’ নেতাদের ‘পৃথক’ তালিকার আলোকেই ওই দুটি টিম এ কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় কমিটির খসড়া তৈরি করে তা দলীয় চেয়ারপারসনের কাছে দেওয়া হবে। চেয়ারপারসন ওই খসড়াটি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ও একজন যুগ্ম মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেই তা চূড়ান্ত করতে পারেন বলে জানা গেছে। সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্রের খসড়া যাচাই-বাছাই শেষে তা জাতীয় কাউন্সিলে পাস করানো হবে।
সূত্র মতে, দলের বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের কিছু অসঙ্গতিও খুঁজে পেয়েছে এ দুটি টিম। যেমন গঠনতন্ত্রে না থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রবাসী কল্যাণ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদকের মতো কিছু পদ রয়েছে। সংশোধনের মাধ্যমে এবার এসব পদ গঠনতন্ত্রে নতুন করে যুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সম্পাদকীয় কয়েকটি পদও বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে থাকছে যোগাযোগ, বাণিজ্য, জনসংখ্যা ইত্যাদি। অন্যদিকে বিএনপির নতুন সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুব মহিলা দলের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
আজ বুধবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিলের অনুমতি পাওয়া এবং প্রস্তুতি কমিটিগুলো গঠনসহ জাতীয় কাউন্সিলের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, এবার দীর্ঘ ছয় বছর পর দলের কাউন্সিল হচ্ছে। এতে দলকে শক্তিশালী করতে নেতৃত্বে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্র আরও আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।