কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে অনুশীলন। একাডেমি মাঠে পিচ-রোলারের ওপর বসে খুনসুটি শুরু করলেন বাংলাদেশের ছয় ক্রিকেটার। বেশ হাসিঠাট্টাও চলছিল তাদের মধ্যে। দূর থেকে অবশ্য ‘টপিক’টা বোঝা গেল না। তবে এটুকু অনুমান করা গেল, আজ সদাপরিচিত মিরপুরের ময়দানে নেপালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ফুরফুরে মেজাজেই নামছে বাংলাদেশ। কে জানে, প্রতিপক্ষ নেপাল বলেই হয়তো নির্ভার থাকার চেষ্টা!
এই যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেট-জাতি হিসেবে দুটি দেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। একটি নেপাল; অন্যটি নামিবিয়া। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আসরের প্রথম অঘটনের জন্মদাতা নেপাল। একই সঙ্গে ইতিহাসও তাদের পক্ষে। যুব বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশ-নেপাল একবারই পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০২ সালের সেই বিশ্বকাপের প্লেট সেমিতে নেপাল নাফিস ইকবাল-মোহাম্মদ আশরাফুল-আফতাব আহমেদ-সৈয়দ রাসেলের বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ২৩ রানে। অথচ সেই নেপালের বিপক্ষে জুনিয়র টাইগারদের কি-না এই ‘হালকা’ মেজাজ!
না। অবস্থা আসলে এমন নয়। ‘বড় ম্যাচে’র আগে বাংলাদেশ যুব দল কোনো চাপ নিচ্ছে না_ আসল কথা হলো এই। এ কারণেই দল ম্যানেজমেন্ট থেকে খেলোয়াড়দের যথাসম্ভব নির্ভার থেকে নিজেদের খেলাটা উপভোগ করতে বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটাও ভুলে যেতে বলা হয়েছে যে, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে যাওয়ার বড় সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে এই ম্যাচে। ‘আরেকটা নতুন ম্যাচ’_ এভাবেই বাংলাদেশ নিচ্ছে কোয়ার্টারের এ লড়াইকে। কিন্তু চাইলেই কি এভাবে নেওয়া যায়?
এখন পর্যন্ত দারুণ একটা আসর কাটিয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজের দল। ‘এ’ গ্রুপে তিন ম্যাচেই খুবই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বলতে গেলে প্রতিপক্ষদের দাঁড়াতেই দেয়নি! এর মধ্যে আবার স্বয়ং মিরাজ ও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত রেকর্ডও গড়েছেন যথাক্রমে যুব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ও রান সংগ্রাহক হিসেবে। এসব তো একটা দলকে হাসিখুশি, আনন্দময় ও আত্মবিশ্বাসী করেই। কিন্তু তার পরও, ‘কখনোই বাংলাদেশ সেমিতে খেলতে পারেনি’ শব্দগুলো কি অগোচরে নাড়া দেবে না?
যুবাদের বিশ্ব আসরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা সাফল্য এসেছিল ২০০৬ সালে, শ্রীলংকায়। সেবার মুশফিক-সাকিব-তামিমদের দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে মোক্ষম সময়ে হেরে যাওয়ায় শেষ চারে যাওয়া হয়নি। সান্ত্বনা হয়ে এসেছিল পঞ্চম স্থান। ব্যাপারটাকে এভাবেও ভাবা যায়_ ইশ, আরেকটু হলেই তো সেরা চারে থাকা যেত! তা এভাবে দ্বিতীয় প্রথমের ক্ষেত্রে, তৃতীয় দ্বিতীয়র ক্ষেত্রে কিংবা চতুর্থ তৃতীয়র ক্ষেত্রে চিরকাল ভেবে এসেছে। তাতে লাভ হয়েছে কী! পরিসংখ্যান ও ইতিহাসের সত্য তো কখনও বদলানো যায় না!
আজ বাংলাদেশের সেই ইতিহাস বদলে দেওয়ার ম্যাচ। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, জুনিয়র টাইগাররা টুর্নামেন্ট শুরুরও আগে থেকে যেভাবে প্রতিটি প্রতিপক্ষকে নাকানিচুবানি খাইয়েছেন, তাতে এই ম্যাচ কঠিন মনে হওয়ার কোনো কারণই নেই। নেপালও গ্রুপ পর্বে তাদের প্রথম দুই উড়ন্ত পারফরম্যান্স করার পর তাদের ‘হিমালয় থেকে ভূমিতে’ নামিয়েছে শক্তিশালী ভারত। তাতে অবশ্য নিজেদের প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে বা ‘খাটো’ করেও দেখছে না বাংলাদেশ। যে কারণে বিজয়ী দলে পরিবর্তনের সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ।
ভবিষ্যতের ‘মাশরাফি-সাকিব’রা দেশকে প্রথমবারের মতো একটা বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনালে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। স্বপ্নে আঁকা ক্যানভাসটা অবশ্য আরও বিস্তৃত_ চ্যাম্পিয়নশিপ! সেজন্য জিততে হবে আর মাত্র তিনটি ম্যাচ। আজ সেই তিনের প্রথমটি। তিনটি জয় এসেছে, আর তিনটি এলেই ষোলোকলা পূর্ণ হয়ে যাবে!
তবুও আক্ষেপ সম্ভবত একখানেই থেকে যাবে_ দর্শক নেই! বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ দর্শকরা মাঠে না থাকলে খেলার আসল মজাটা থাকে নাকি!