ঢাকা: জাতীয় পার্টিতে বেশ কিছুদিন ধরে নানা ঘটনার পর এবার আরেকটি কঠিন ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ-ই প্রথম দলের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র নিযুক্ত করলেন তিনি। তাও আবার নবনিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এবং মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার পেলেন সে দায়িত্ব! পদের পাশাপাশি মুখপাত্র হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন তারা। এর ফলে এখন থেকে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো নেতার বক্তব্য আর পার্টির বক্তব্য বলে গণ্য হবে না।
এরশাদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে পার্টির মধ্যে একটি ধোঁয়াশা কাজ করছে। অনেক সময় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যরা একেকজন একের ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এতে করে ভেতরে বাইরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। মুখপাত্র নিযুক্ত করাটা পার্টির জন্য মঙ্গলজনক এবং ভালো লক্ষণ বলেই মনে করছেন তারা।
সোমবার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় বলেন, ‘এখন থেকে জিএম কাদের অথবা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার মিডিয়াতে পার্টি সম্পর্কে বক্তব্য দেবেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পার্টির এই দায়িত্ব দিয়েছেন। বিচ্ছিন্নভাবে কারো মন্তব্য, বক্তব্য বা বিবৃতি (কখনো কখনো নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জাতীয় পার্টির বক্তব্য বলে বিবেচিত হবে না।’
সরকারে যোগ দেয়ার পর থেকেই এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্ব ক্রমেই দানা বাঁধতে থাকে। একদিন রওশনের নেতৃত্বাধীন অংশের সরকারের তোষামোদি অন্যদিকে চেয়ারম্যানের কথায় নির্বাচনে অংশ না নেয়া বঞ্চিত অংশের (জিএম কাদেরসহ) চাপ একটা বিস্ফোরণের জন্য শক্তি সঞ্চয় করছিল।
অবশেষে সেই বিস্ফোরণ ঘটলো। হঠাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় বইয়ে দিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ভাই জিএম কাদেরকে নিজের উত্তরসূরী ঘোষণার সঙ্গে দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনলেন। তার পার্টির প্রেসিডিয়াম সভা অনুমোদন করে নেয়ার একদিন পরই তাদের দুইজনকে পার্টির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হলো।
ফলে এখন যারা রওশন এরশাদকে আশ্রয় করে সরকারের সুবিধা ভোগ করে আসছেন তারা নড়েচড়ে বসেছেন। বিশেষ করে মুখপাত্র নিযুক্ত হওয়ায় এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপরে প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বলেছেন, দীর্ঘদিন আমাদের পার্টিতে মুখপাত্র ছিল না। আওয়ামী লীগে মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিএনপির রুহুল কবির রিজভী কথা বলছেন। তারা যেটা বলছেন পার্টির মুখপাত্র হিসেবে বলছেন। জাতীয় পার্টিতে সেধরনের ব্যাপার ছিল না। না থাকার ফলে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক আগে থেকেই স্যারকে বলে আসছিলাম, আপনি সবসময় মিডিয়া ফেস করতে পারে না। আমাদের একজন একেক সময় কথা বলছে। সেটাতো ঠিক না। পার্টির পাঁচজন যদি একই কথা বলে, পাঁচ ঢঙে বলে। তবে দুই বছর আগে ফিরোজ রশিদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
সোহেল রানা আরো বলেন, এখন থেকে পার্টির বিষয় যেটা বলতে হবে, এটা তারা দুইজনই বলতে পারবেন। তারা যেটা বলবেন, এটা জাতীয় পার্টিই বলছে। অন্যরা যেটা বলবে এটা তাদের ব্যক্তিগত মতামত। দীর্ঘদিন পার্টিতে যেটা গ্যাপ ছিল সেটা, সেটা এরমধ্যেই ফুলফিল হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর কঠোর সমালোচনা করে প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, আমার মতে এরশাদ সাহেব যদি কোনো ভুল করে থাকেন, সেটা হয়েছে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব করা।
হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান পার্টির মুখপাত্র হিসেবে যে দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা পার্টির জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ এবং পার্টির জন্য মঙ্গল নক।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘প্রত্যেক পার্টিরই মুখপাত্র আছে। কিন্তু এতদিন আমাদের পার্টিতে ছিল না। পার্টির মুখপাত্র না থাকলে ধারাবাহিকতা থাকে না। স্যার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা দলের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচত বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার একাধিক ফোন নম্বরে কল করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এরশাদ তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদারকে একক সিদ্ধান্তে দলের মহাসচিব ঘোষণার পর থেকেই এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। আর সে কারণেই গত রোববারের জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ আটজন সভায় অংশ নেননি। এরা সবাই এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রওশনপন্থি হিসেবেই পরিচিত।