ঢাকা : শীতের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে বেড়েছে গ্যাস সঙ্কট। এলাকাভেদে কোনো কোনো এলাকায় সকালে, কোথাও দুপুরে কোথাও আবার রাতে গ্যাস থাকে না। এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে গ্যাস আসে শেষরাতের দিকে। আবার এলেও চাপ এতো কম থাকে যে রান্না করা যায় না। শুধু রান্নাবান্নাই নয়, এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। সিএনজি স্টেশনগুলোতেও গ্যাসের চাপ কম থাকায় যানবাহনগুলোকে তিন-চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শীতের শুরু থেকেই রাজধানীজুড়ে চলছে এমন চিত্র। সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিতে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো সুফল।
ঢাকায় গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবছর প্রচণ্ড শীতে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এসময় পাইপ লাইনে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট জমে সরবরাহে বাধার সৃষ্টি করে। এছাড়া অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে একটি বড় অংশ চুরি হয়। তবে এ বছর মূল সরবরাহ লাইনে ময়লা আসায় পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে। কয়েকটি পাইপলাইনে সরবরাহ বন্ধ আছে ।
ঘাটতি মেটাতে গত কয়েক বছর ধরে এই সময়টাতে বিদ্যুৎ, সার কারখানা, শিল্পে রেশনিং করে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে এবার গিজার চালাতে ও ইট ভাটায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিতাস।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস সঙ্কট ধীরে ধীরে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এমনটি হচ্ছে। এছাড়া সরবরাহ পাইপলাইনের অব্যবস্থাপনাও এর জন্য দায়ী। তাই গ্যাস রেশনিং করেও খুব বেশি লাভ হবে না।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মুগদা, রামপুরা, ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, কলাবাগান, বেগুনবাড়ীসহ অধিকাংশ এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস থাকে না।
রামপুরার হাজীপাড়ার নিবাসী গৃহীনি শান্তা ইসলাম বলেন, গ্যাসের সমস্যায় রাতেই রান্না করে রাখি। কিন্তু বাচ্চার খাবার তৈরিতে বেশি সমস্যা হয়। তাই বাচ্চাকে বাধ্য হয়ে বিকল্প খাবার খাওয়াতে (প্যাকেটজাত শিশু খাদ্য) হচ্ছে।
সূত্রাপুর এলাকার একটি বেকারির মালিক মকবুল মিয়া বলেন, গ্যাসের অভাবে তার কারখানা দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
মিরপুরের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ গ্যাসের সঙ্কটে তাদের বাসায় রান্নাই হয়নি। সবাই বাইরে খেয়েছেন।
রাজধানীর সিএনজি স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গ্যাস নিতে আসা গাড়ির দীর্ঘ সারি। কারণ, চাপ কম থাকায় গ্যাস নিতে তিন-চার ঘণ্টা লাগছে ।
তিতাসের বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন শতশত অভিযোগ আসছে গ্যাসের সঙ্কট নিয়ে। প্রতিবার শীত এলেই এমনটি হয় বলে জানিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপকরা। তবে এবার পরিস্থিতি একটু বেশি খারাপ বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, বাখরাবাদ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইনে ময়লা আসায় পরিস্থিতি একটু জটিল হয়েছে। তবে শিগগিরই এ সমস্যা কেটে যাবে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার এটি চালু হতে পারে।
তবে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএল এর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাইপলাইনের ময়লা বড় বিষয় নয়। এটা পরিষ্কারের কাজ চলছে। রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কটের প্রধান কারণ চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বিশাল ব্যবধান।
তিতাসের তথ্য মতে, ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার জন্য দৈনিক গ্যাসের চাহিদা গড়ে ১৮৫ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় গড়ে ১৭৫ কোটি ঘনফুট। যদিও সংশ্লিষ্টদের মতে, চাহিদা ২০০ কোটি ঘনফুটের মতো।
আর সারা দেশের চাহিদা সরকারের মতে, দৈনিক ৩২০ কোটি ঘনফুট, পেট্রোবাংলা সরবরাহ করে ২৭০ কোটি ঘনফুট। প্রকৃত চাহিদা ৩৫০ কোটি ঘনফুট বলে দাবি করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বলেছেন, গ্যাসের মজুদ ক্রমেই কমে আসছে। এতে ঘাটতি বাড়বে। এ জন্য বাসাবাড়িতে জ্বালানির বিকল্প খোঁজার সময় হয়েছে।
গিজার ও ইটা ভাটায় গ্যাস নয়
গ্যাসের ঘাটতি সমন্বয়ে গ্যাসের মাধ্যমে গিজার (পানি গরমের কাজে ব্যবহৃত) চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে বিতরণ কোম্পানি তিতাসের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে গ্যাসচালিত সব গিজারের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া সোমবার পৃথক আরেক নির্দেশনায় কোম্পানিটি ইটভাটায় গ্যাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইট তৈরিতে গ্যাস ছাড়া অন্য জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তা না হলে গ্যাস সরবরাহ আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে কয়টি ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হয় তার কোনো তথ্য-উপাত্ত তিতাসের কাছে নেই।