স্মরণকালের ভয়াবহতম তুষার ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে আমেরিকান ১১টি স্টেটের জনপদ। এই সব স্টেটে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পুরো সিটি, নির্দেশ দেয়া হয়েছে যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের না হবার জন্য। ভয়াবহ তুষার ঝড়ে ১১টি স্টেটের প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্টেটে মারা গিয়েছে ১৪ জন মানুষ। তুষার ঝড়ের কারণে হাজার হাজার লোকাল এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ১১ টি স্টেটের প্রায় ২ লাখ মানুষ এখন অন্ধকারে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কারণ প্রচন্ড শীতে তাদের জীবন যাপন বিপর্যস্ত। নিউজার্সির নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে।
তুষার ঝড়ে আক্রান্ত স্টেটগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবেখ্যাত নিউইয়র্ক সিটি, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড, টেনেসি, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, দেলওয়ার এবং ক্যান্টাকি। এ সব স্টেটে গত ২২ জানুয়ারি তুষার ঝড় শুরু হবার সাথে সাথেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
ওয়াশিংটন সিটির মেয়র মুরিয়েল বাউসার, নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর এন্ড্রু কুমো, মেয়র বিল ডি ব্লাজিও, নিউজার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টিসহ অন্যান্য স্টেটের মেয়ররা সার্বক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে নিজ নিজ এলাকার জনগণকে নিরাপদে বাসায় থাকার আহবান জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন, নিউজার্সিসহ অন্যান্য স্টেটে জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও নিউইয়র্ক সিটিতে ২৩ জানুয়ারি দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে সকল যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন দোকান পাঠ এবং রেস্টুরেন্ট। বিশেষ করে ম্যানহাটনে। তুষার ঝড়ে আক্রান্ত প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে বাংলাদেশীরাও রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেটে ১৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেলেও কোন বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তবে আমেরিকানদের মত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী। তারা জানান, বাইরে এমন পরিস্থিতি যে কারো বাসায় যাবার মত অবস্থাও নেই। রাস্তাঘাট তুষারে আচ্ছন্ন, চলছে না কোন যানবাহন। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এবং গভর্নর জানিয়েছেন, ২৪ জানুয়ারি সকাল ৭টা পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে কোন যানবাহন চলবে না। যারা বের হবে তাদের গাড়ি টো করা। বিভিন্ন স্টেট থেকে জানা যায়, ২৩ ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত ম্লো পড়েছে। মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়ায় বিভিন্ন স্টেটে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। তুষার ঝড়ের পাশাপাশি প্রচন্ড বাতাসে কয়েক মানুষের বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে শুধু নর্থ ক্যারোলিনাতেই ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ অন্ধকারে রয়েছেন। নিউজার্সিতে ১২ হাজার মানুষের বাড়িঘরের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আবার নিউজার্সির নিম্নামাঞ্চলে বন্যা দেয়া দিয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত মানুষজনদের সেন্টারে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রেকর্ড সৃষ্টিকারী তুষার পড়েছে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, (তৃতীয় বৃহৎ) পেনসিলভেনিয়ায়। এসব স্টেটে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি স্লো পড়েছেন।
নিউইয়র্কে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় অনেক এলাকাই জনমানব শূণ্য এলাকায় পরিণত হয়েছে, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ব্যবসা- বাণিজ্য এবং ব্রডওয়ে শো। আবার যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেই সব এলাকা ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় ২০০টির মত গাড়ি দূর্ঘটনা ঘটেছে। কোন কোন রাস্তায় অনেক গাড়ি প্রায় ২৫ ঘন্টা যাবত রাস্তায় অবস্থান করছে। ২৪ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১ টার সময় তুষার ঝড় বন্ধ হবে। যে কারণে পার্কিংও সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছে। সকাল ৭টার পর থেকে সিটির যানবাহন চলাচল শুরু হবে। তুষার ঝড়ে নিউইয়র্কে ৩ জন, ভার্জিনিয়ায় ৩ জন, নর্থ ক্যারোলিনায় ৫ জন, টেনেসিতে ২ জন ও ক্যান্টাকিতে ১ জন নিহত হয়েছে।
জরুরী অবস্থা জারিকৃত ১১টি টেস্টের মেয়র এবং গভর্নররা এ সব এলাকার সকল মানুষকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাসায় অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন।