হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহতায়ালা অজস্র বৈশিষ্ট্য আর মর্যাদা এবং গুণ ও সৌন্দর্যে ভূষিত করেছেন। তার নাম ও সুনামকে করেছেন সমুন্নত। রাসূলের সম্মান বৃদ্ধি ও সুনাম প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহতায়ালা নবীর নামকে নিজের নামের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। রাসূলের আনুগত্যকে নিজের আনুগত্য আখ্যায়িত করেছেন এবং তার অনুসরণ-অনুকরণকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার উপায় বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ঈমানের কালেমা থেকে শুরু করে নামাজের তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু…) ও দরূদ, আজানের বাক্যসমূহ থেকে নিয়ে দাফনের দোয়া-কালাম, উর্ধ্বজগত থেকে নিয়ে পার্থিব জগত এবং রূহের জগতে শপথ গ্রহণের সময় থেকে নিয়ে কবর-হাশর, বরজখ ও আখেরাত পর্যন্ত সব জায়গায়, সবক্ষেত্রে নবীর নামকে আল্লাহতায়ালা নিজের নামের সঙ্গে একত্রে উল্লেখ করেছেন।
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সঙ্গে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ; ‘ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা’র সঙ্গে ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদূহু ওয়া রাসূলুহু, ‘বিসমিল্লাহ’র সঙ্গে ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ, ‘মার রাববুকা’র সঙ্গে মান হাজার রাজুল’কে- এমনভাবে যুক্ত করা হয়েছে যে, একটি অপরটি থেকে আলাদা হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যেখানেই আল্লাহতায়ালার কথা সেখানেই তার সবচে প্রিয় ও সবচেয়ে সম্মানিত বান্দার আলোচনা।
আল্লাহ ও নবীর নাম একত্র উচ্চারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল দরূদ ও সালাম। প্রত্যেক দরূদ ও সালামে আল্লাহর নবীর জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। এ কারণে দরূদ ও সালাম যেমন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হক আদায়ের একটি সেরা আমল; তেমনি সেটি দোয়া ও প্রার্থনার সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে অনেক বড় ইবাদত।
আর সে কারণেই কোনো ব্যক্তি যদি অজিফা ও দৈনন্দিন জিকির-আজকারের সবটুকু সময় দরূদ ও সালামের আমলে ব্যয় করে তবে সে আল্লাহর ইবাদতে এবং আল্লাহর জিকিরেই মশগুল রয়েছে বলা হবে।
দরূদ শরিফের সৌন্দর্য ও তাৎপর্যের মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এতে একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হক আদায়, উভয়ের প্রতি ভালোবাসায় দৃঢ়তা, সুন্নতের অনুসরণের সুযোগ, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়, উভয়ের সন্তুষ্টি অর্জন, হাশরের ময়দানে নবী করিমের সুপারিশ লাভ ও নিজের উন্নতি ও মরতবা বৃদ্ধি-সবকিছুই নিহিত রয়েছে।
এর বেশি আর কী চাই যে, নবী করীমের প্রতি দরূদ ও সালামের বদৌলতে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা দরূদ পাঠকারী উম্মতের ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করেন। দরূদের দ্বারা দ্বীন ও ঈমান, দুনিয়া-আখেরাত এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বহুবিধ কল্যাণ সাধিত হয়। এর মাঝে বহু হেকমত আর রহস্য নিহিতি আছে, সেই সঙ্গে রয়েছে বহু শিক্ষা।
একটি বড় শিক্ষা হলো- এতে চিন্তাভাবনা করলে মানুষের মাঝে বিনয় ও আল্লাহমুখিতার সৌভাগ্য অর্জিত হয়।
দ্বিতীয় শিক্ষা হলো- এর দ্বারা শিরকের প্রতি ঘৃণা এবং তাওহিদের ওপর অটল-অবিচল থাকার স্বভাব জন্ম নেয় মনে।
দরূদ পাঠের এত উপকারিতা সত্ত্বেও দরূদ পাঠের প্রতি অনীহা দেখা যায়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দরূদ একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। দিন-রাত ও সকাল-সন্ধ্যায় পালনীয় যাবতীয় অজিফা ও জিকির-আজকারের মধ্যে যার অবস্থান হওয়া উচিত সর্বাগ্রে।
নামাজে পঠিত দরূদ শরিফ তো সবারই মুখস্থ। এ ছাড়াও ছোট-বড় বিভিন্ন দরূদ শরিফ হাদিস ও সিরাত গ্রন্থে পাওয়া যায়। যার জন্য যে দরূদ সহজ মনে হয়, সেই দরূদটিই প্রতিদিন নিয়মিত পাঠ করা। তবে, সবচেয়ে উত্তম ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ দরূদ শরিফ হলো দরূদে ইবরাহিমি। যা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়া হয়।
দরূদে ইবরাহিমির উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ- কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিম্নের দরূদ পাঠ করবে তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আনযিলহুল মাক-আদাল মুকাররাবা ইনদাকা ইয়াওমাল কিয়ামাহ। -নাসাঈ ও আহমদ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিম্নের দরূদ পাঠ করবে তার সওয়াব লেখার জন্য সত্তর জন ফেরেশতাকে এক হাজার দিন পর্যন্ত মশগুল রাখা হবে।
উচ্চারণ : জাজাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদান মাহুয়া আহলুহু। -তাবরানি
বলা হয়েছে, নিম্নের দরূদটি প্রত্যেহ ১০০ বার পাঠ করলে দ্বীন ও দুনিয়ার সমুদয় সফলতা অর্জিত হয়। ব্যর্থতা দূরে চলে যায়। এই দরূদটি ইসমে আজম নামে খ্যাত। দরূদটি হলো-
উচ্চারণ : আল্লাহু রাব্বু মুহাম্মাদিন সাল্লা আলাইহি ওয়া সাল্লামা নাহনু উম্মাতু মুহাম্মাদিন সাল্লা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। -বোখারি শরিফ
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি চায় যে তার মাল-সম্পদ বৃদ্ধি হোক সে যেন নিম্নের দরূদ শরিফের ওপর আমল করে। এই দরূদটি প্রতিদিন একশ’ বার পাঠ করার কথা বলা হয়েছে।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়া সল্লি আলাল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাতি ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। -বোখারি শরিফ
সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দরূদ হচ্ছে-
উচ্চারণ : সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই সংক্ষিপ্ত দরূদ পড়লেও দরূদ পাঠের ফজিলত পাওয়া যাবে।
আল্লাহতায়ালা সবাইকে নবীর ওপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করার তওফিক দান করুন। আমিন।