দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে লাগাতার কর্মবিরতি স্থগিত করলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা আজ বুধবার থেকে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের মতোই ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া শুরু করবেন। এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। এদিকে, আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে সরে এলো বিসিএস-প্রকৃচি সমন্বয় কমিটিও। মঙ্গলবার সরকারের সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর তারা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ফেডারেশনের বৈঠক শেষে শিক্ষক নেতাদের এই সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের কথা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান অধ্যাপক কামাল।
তিনি বলেন, ‘দাবি পূরণে আমরা আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছি। এর অর্থ কর্মসূচি প্রত্যাহার নয়। কেননা কর্মসূচি স্থগিত করা আন্দোলনেরই অংশ। যদি আমাদের দাবি খণ্ডিতভাবে বাস্তবায়ন করা হয় কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে যদি দাবি বাস্তবায়নে বিলম্ব করা হয়, তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না।’
তিনি আরও জানান, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ফেডারেশনের পর্যালোচনা সভায় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সময় তিনি শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষক নেতৃত্বকে সঙ্গে রেখে সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ।
বেতন কাঠামোর অসঙ্গতি নিরসনে তিন দফা দাবিতে গত ১১ জানুয়ারি থেকে দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক। গতকাল মঙ্গলবারও কর্মবিরতি পালন করা হয়।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন শিক্ষকরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকদের বঞ্চনার কথা শুনে অবিলম্বে তা নিরসনের আশ্বাস দেন। শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকালের শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অচল অবস্থা পুরোপুরি কেটে গেল।
প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি :আন্দোলন থেকে সরে এলো বিসিএস-প্রকৃচি সমন্বয় কমিটিও। গতকাল সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পরে কমিটির একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কমিটির আহ্বায়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সমকালকে বলেন, বেতন বৈষম্য নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা ইতিবাচক। যেহেতু সমাধানের পথে এগোচ্ছে, এখন আর কোনো কর্মসূচির প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।
গতকাল সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের অধীনে ১৭টি দপ্তর ন্যস্ত করা সংক্রান্ত পরিপত্রসহ উপজেলা পরিষদ আইন-২০১১ সংশোধনের দাবি জানানো হয়। জবাবে সরকারের সচিবরা বলেন, পরিপত্রটি সংশোধন করা হবে। উপজেলা পরিষদ আইনের বিষয়েও পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ থেকে এ ব্যাপারে সচিবদের কাছে চিঠি দেবে বলে সভা সূত্র জানায়। শিগগিরই কমিটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে গঠিত সচিবদের কোর কমিটি বৈঠক করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বিসিএস-প্রকৃচি সমন্বয় কমিটির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন আহ্বায়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিসিএস সমন্বয় কমিটির সভাপতি কবির আহমেদ ভুইয়া, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান, কমিটির সদস্য স.ম গোলাম কিবরিয়া।
বৈঠকের বিষয়ে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তারা কোনো কর্মসূচি দেবেন না বলে বৈঠকে জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে সমাধানের পথে এগোনো হচ্ছে।