অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ৬শ’ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ইঙ্গিতে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বর প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে নেমে পরেছেন। প্রার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারাই এগিয়ে। নতুন মুখের প্রার্থীরা দলের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীক পেতে দক্ষিণ বাংলার আওয়ামী লীগের কান্ডারী আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণের পাশপাশি হঠাৎ করে দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। হাসানাতের নিজ নির্বাচনী এলাকা আগৈলঝাড়ার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অবস্থান করছেন এমপির বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে। যা এর আগে আগৈলঝাড়ায় কখনও দেখা যায়নি। পৌর নির্বাচনের আগে থেকে এলাকায় অবস্থান করা এমপি হাসানাতও হাস্যরসের মাধ্যমে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে জেনে নিচ্ছেন এলাকায় ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মাঠে কার অবস্থান কতটুকু।
সূত্রমতে, আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে নিজেরা জনসমক্ষে প্রচার করলেও বাস্তবে এর সংখ্যা খুব বেশী হবেনা বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। তবে সকল প্রার্থীই বলছেন- দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না। আর প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে হাসানাত আবদুল্লাহর মতামতই প্রাধান্য পাবে। তবে অনেকেই কৌশলে নিজের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে একাধিক প্রার্থীকে তাদের পক্ষে ডামি হিসেবে টেনে বের করছেন। মনোনয়ন দৌঁড়ের শেষ সময়ে একজন প্রার্থীর হয়ে সকলকে কাজ করতে এমপি’র নির্দেশ পেলে মনোনয়ন হাউসে ওই সকল ডামি প্রার্থীরা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে সাপোর্ট করার জন্যই মূলত: তারা এখন পর্যন্ত প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কৌশলের সেই সুযোগ তারা পাবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়।
রাজিহার ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইলিয়াস তালুকদার, যুবলীগ সহ-সভাপতি রফিকুল তালুকদার, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি জগদীশ ভক্ত অন্যতম। বাকাল ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও শ্রমিকলীগ নেতা বিপুল দাস, শ্রমিকলীগ সভাপতি সোহেল ইমরোজ লিটন, ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিমেষ মন্ডল। বাগধা ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি, সহ-সভাপতি কিশোর বিশ্বাস, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি এআর ফারুক বক্তিয়ার, সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী মিয়া।
দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নের বিরোধিতা করে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নিজ ইউনিয়ন গৈলায় পরপর দু’বার পরাজিত হয়েছে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী। তাই এবার দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে গ্রহণযোগ্য কাউকে প্রার্থী মনোনয়ন করবেন এমনটাই দাবি ওই ইউনিয়নসহ অন্যান্য ইউনিয়নের রাজনৈতিক বোদ্ধাদের। গৈলা ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন হাইকোর্টের আইনজীবি রনজিৎ সমদ্দার, উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক সবুজ আকন, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কামরুজ্জামান আজাদ, সাধারণ সম্পাদক সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন মোল্লা। এদিকে গত ইউপি নির্বাচনে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। রতœপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা সরদার, শাহীন আলম টেনু সন্যামত, যুবলীগ সহ-সভাপতি ফরহাদ তালুকদার, যুবলীগ নেতা রেমন ভুঁইয়া ও রিয়াজ কাজীর নাম শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অনেকটাই চাপের মুখে রয়েছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জেলা উত্তর বিএনপি’র একাধিক নেতা তাদের যোগ্য প্রার্থী সঙ্কটের কথা জানিয়ে বলেন, গ্রামগঞ্জে বিএনপি’র জনপ্রিয়তা থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বর্তমানে যেকোন নির্বাচনে বিএনপি’র জন্য জয়লাভ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরেও তারা সঙ্কট কাটিয়ে উঠে দলীয় প্রার্থী দিয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।