গ্রাম বাংলা ডেস্ক: মাওয়ায় লঞ্চডুবির দুদিন পর বুধবার ভোলা সদর ও চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনা এবং শরীয়তপুরে পদ্মা নদীতে ভেসে উঠেছে পাঁচটি লাশ।
উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে দুই জনের পরিচয় জানা গেছে। বাকি লাশগুলোও ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬ এর যাত্রীদের বলে স্থানীয় পুলিশের ধারণা।
এছাড়া শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর-ওয়াপদা এলাকা এবং জাজিরার কুণ্ডের চরে আরো পাঁচটি লাশের খবর পাওয়া গেলেও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।
ভোলা : বুধবার সকাল থেকে ভোলা সদরের রাজাপুর ও কাঠিরমাথা এলাকায় মেঘনা নদী থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামন জানান, সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর এলাকার নদীতে এক যুবকের লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়।
লাশ উদ্ধারের পর তার পকেটে পাওয়া মোবাইল ফোনের সিম থেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, ওই যুবকের নাম ফাহাদ আকন্দ। তিনি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার লুৎফর রহমান আকন্দের ছেলে। তিনি তেজগাঁও কলেজে বিবিএতে পড়তেন। ঈদের ছুটি শেষে তিনি ঢাকায় ফিরছিলেন।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খালেকুজ্জামান জানান, ফাহাদের নাম নিখোঁজের তালিকার ৯৭ নম্বরে ছিলেন।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার কাঠিরমাথা এলাকায় নদীতে ভেসে ওঠে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী আরেক যুবকের লাশ।
পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, লাশগুলোর বিষয়ে মাওয়ায় যোগাযোগ করা হয়েছে।
চাঁদপুর : চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নে আজ বুধবারও দুটি লাশ ভেসে উঠছে নদীতে। এর মধ্যে মাঝিরবাজারে উদ্ধার করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশ। আর মিয়ার বাজারে পাওয়া লাশটি আনুমানিক ৩৩ বছর বয়সী এক যুবকের।
নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াসিন রতন জানান, সকালে মাঝিরবাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী খবর দেয়। পরে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
হাইমচর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, তারা লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে মাঝিরবাজার ও মিয়ারবাজারে লোক পাঠিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবারও নীলকমল ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকার মেঘনা নদীতে থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ, যার মধ্যে একজন মুন্সীগঞ্জের ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী ছিলেন বলে পুলিশের ধারণা।
আনুমানিক ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সী ওই নারীর লাশ মঙ্গলবারই মাওয়ায় পাঠানো হয়। তবে সেখানে সনাক্ত করতে না পারায় পরিচয় নিশ্চিত করতে মাদারীপুরের শিবচরে পাঠানো হয়েছে বলে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল জানান।
শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চর আত্রা এলাকায় পদ্মা নদীতে সকালে এক নারীর লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।
নড়িয়ার ইউএনও মনিরা বেগম জানান, লাশটি উদ্ধারের পর তারা নশ্চিত হয়েছেন যে মেয়েটি নৌমন্ত্রীর ভাগ্নি জান্নাত নাঈম লাকী।
লাকী চীনের একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তার খালত বোন ঢাকার শিকদার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান হীরার লাশ সোমবার মাওয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার করা হয়। হীরার বোন ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা এখনো নিখোঁজ।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর ওয়াপদা এলাকায় দুটি লাশ ভাসতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী এক লঞ্চ যাত্রী মাওয়ায় পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছেন। আমরা শরীয়তপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে লাশগুলো উদ্ধার করতে বলেছি।
দাদন নামে শরিয়পুরের জাজিরা উপজেলার সিডার চর এলাকার এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার জাজিরার কুণ্ডের চরের সিডার চর এলাকার পদ্মা থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করে স্বজনরা নিয়ে গেছেন। তবে প্রশাসনের কাছে এরকম তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন লৌহজং থানার ওসি তোফাজ্জেল হোসেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাওড়াকান্দি থেকে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে লৌহজং ক্রসিংয়ে ডুবে যায় লঞ্চ এমএল পিনাক-৬।
দুর্ঘটনার পরপরই নদী থেকে দুই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬৯ জন নিখোঁজ যাত্রীর একটি তালিকা তৈরি করেছে লৌহজং থানা পুলিশ।