বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ভারতের ছয় জঙ্গি-সন্ত্রাসীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ‘মাফিয়া ডন’ দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুর রউফ দাউদ মার্চেন্টকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলে তাকে ভারতে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু দাউদ মার্চেন্ট নন, আরও পাঁচ জঙ্গি-সন্ত্রাসী এই তালিকায় রয়েছেন। তারা হলেন_ ভারতীয় জঙ্গি সংগঠন ‘আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের’ নেতা
মাওলানা মনসুর আলী হাবিবুল্লাহ, মুফতি ওবায়দুল্লাহ ওরফে আবু জাফর ও মাওলানা এমদাদুল্লাহ এবং জাহিদ শেখ ও আরিফ হুসাইন। এর বিনিময়ে ভারতের কারাগারে বন্দি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও শুরু হবে। এর মধ্যে দু’একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীও রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান সমকালকে বলেন, দুই দেশের বন্দি প্রত্যর্পণের বিষয়টি দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একাধিকবার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনার কিছু ফল এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। দু’এক মাসের মধ্যে আরও কিছু ফল দৃশ্যমান হবে।
সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দক্ষিণ এশিয়া থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করবে। বন্দি বিনিময়-সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি হওয়ার পর এ বিষয়ে কিছু তৎপরতা দৃশ্যমান হয়। দাউদ মার্চেন্টের অব্যাহতির আবেদন ওই প্রক্রিয়ার অংশ। গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দাউদ মার্চেন্টকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় আটকাদেশ থেকে অব্যাহতির আবেদন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আগামী ৩১ জানুয়ারি এ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
ভারতের মুম্বাইয়ের সঙ্গীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমারকে ১৯৯৭ সালের ১২ আগস্ট আন্ধেরি এলাকায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই মামলায় ২০০২ সালে ভারতীয় আদালত দাউদ মার্চেন্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০০৯ সালে তাকে পারিবারিক কারণে ১৪ দিনের প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পেয়েই তিনি পালিয়ে যান। ওই বছরই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এরপর ২০০৯ সালের ২৭ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে এক সহযোগীসহ দাউদকে গ্রেফতার করে ডিবি। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে থাকার পর ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর দাউদ জামিন পান। ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ওই রাতেই তাকে ৫৪ ধারায় আবার গ্রেফতার করে ডিবি। তিনি বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, অব্যাহতি পাওয়ার পর দাউদ মার্চেন্টকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন ১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ফেরত দেয় ভারত।
এদিকে ভারতীয় আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের নেতা মাওলানা মনসুর আলী হাবিবুল্লাহ, মুফতি ওবায়দুল্লাহ ওরফে আবু জাফর ও মাওলানা এমদাদুল্লাহ এবং জাহিদ শেখ ও আরিফ হুসাইনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শিগগিরই শুরু হচ্ছে। এই ছয়জন বিভিন্ন মামলায় জামিনও পেয়েছেন। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) আটকাদেশের কারণে তারা এখনও কারাগারে বন্দি। তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনগত বাধা দূর করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
২০০৯ সালে ভারতীয় আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের দুই নেতা মাওলানা মনসুর আলী হাবিবুল্লাহ ও মুফতি ওবায়দুল্লাহকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার দুই নেতা ডিবিকে জানান, তারা ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের অপর নেতা মাওলানা এমদাদুল্লাহকেও ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে।
দাউদ মার্চেন্টের মতো জাহিদ শেখ ও আরিফ হোসাইন দাউদ ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা ২০০৯ সালে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এরপর থেকেই তারা বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতার হওয়ার আগে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করে মুম্বাইয়ের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের কারাগারে আটক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজি বাংলাদেশের নেতা দুই সহোদর মুরসালিন, মুত্তাকীন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, সাবেক এমপি আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দীপু, চট্টগ্রামের শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন, চরমপন্থি নেতা মুক্তার হোসেনসহ শতাধিক অপরাধীকে ফেরত চায় বাংলাদেশ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করে আসছিল, আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে মুরসালিন ও মুত্তাকীনের সম্পর্ক রয়েছে।