ঢাকা : শিগগিরই ঘোষিত হতে যাচ্ছে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের নতুন পূর্ণাঙ্গ (আংশিক) কমিটি। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ইতোমধ্যে কমিটির তালিকা জমা দেয়া হয়েছে। হাই কমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পেলে যেকোনো দিন ঘোষিত হবে এ কমিটি।
২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ জবি ছাত্রদলের সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষিত হয়। কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও তা এখনো বহাল আছে।
ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক দুজন সহ-সভাপতি ও দুজন যুগ্ম সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক জগন্নাথ কলেজ) শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠনে সিন্ডিকেটের প্রভাব সর্বজনবিদিত। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলও এক্ষেত্রে নিরুপায়। কেননা, তারাও কোনো না কোনো সিন্ডিকেটের বদৌলতে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন।
শুরুতে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় আমান উল্লাহ আমান (বিএনপির তৎকালীন ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক) ও সাগির আহমেদের (জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক) নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সময়ের পরিক্রমায় সিন্ডিকেটে পরিবর্তন আসলেও কমিটি গঠনে সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েই গেছে। জবি ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় এখন চারটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে।
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মিয়া নূর উদ্দিন অপু, জগন্নাথের সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মওলা শাহীন, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, জগন্নাথের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, জগন্নাথের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান খলিল এবং জগন্নাথের বর্তমান সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজল ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মহসিন বিশ্বাস- এরা সবাই আমান (আমান উল্লাহ আমান) গ্রুপ মেইনটেইন করেন।
জগন্নাথ ছাত্রদলে এরা সবাই কাজী রওনকুল ইসলাম টিপুর রিক্রুটমেন্ট (টিপু জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি)। এদের সবার আদর্শিক গুরু হামিদুর রহমান হামিদ। আমানের এক নম্বর শিষ্য হচ্ছেন হামিদ। অন্যদিকে, টিপু হলেন আমানের দুই নম্বর শিষ্য। বেশ কয়েক বছর ধরে আমান গ্রুপের পক্ষে অপু ও বেলায়েত বিএনপির হাই কমান্ড মেইনটেইন করে আসছেন। এ ছাড়া হামিদ ফিল্ড পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছেন। এ তথ্য ছাত্রদলে ওপেন সিক্রেট।
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এ্যানী সিন্ডিকেটে আরও রয়েছেন জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল আজিজ ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. কাজী মাযহারুল ইসলাম দোলন।
বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া জগন্নাথের সাবেক সেক্রেটারি এবিএম পারভেজ রেজা ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল সিন্ডিকেটও সক্রিয়।
জবি ছাত্রদলের কমিটি ‘আহ্বায়ক ও আংশিক’ দুই ফরমেটেই হওয়ার আলোচনা রয়েছে। সিনিয়র ও তুলনামূলক জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হলে তা আহ্বায়ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হলে তা পূর্ণাঙ্গ (আংশিক) হতে পারে। তবে শুধু জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
২০০৫-০৬ সেশনের ছাত্রদল কর্মিরা জবির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। জুনিয়র বলতে এই সেশন এবং ২০০৪-০৫ সেশনের ছাত্রদল কর্মিদের বোঝানো হয়ে থাকে। জবিতে আহ্বায়ক কমিটি হলে এই দুই সেশনের ছাত্রদল কর্মিদের যু্গ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, আংশিক কমিটি হলে যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলোতে এই দুই ব্যাচ থেকে নেতা নির্বাচন করা হতে পারে।
সিনিয়র ও তুলনামূলক জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হলে আহ্বায়ক হিসেবে জবির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আল আশরাফ মামুনের (সেশন : ১৯৯৮-’৯৯) সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তিনি টুকু ও ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের লবিং মেইনটেইন করেন। সেক্ষেত্রে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে জবির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মহসিন বিশ্বাস ও জবি ছাত্রদল নেতা মাহমুদুল হাসান রঞ্জুর (সেশন : ২০০০-’০১) মধ্যে যে কেউ আসতে পারেন। মহসিন বরিশাল বেল্ট মেইনটেইন করেন। এ ছাড়া তিনি আমান-হামিদ সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট। রঞ্জুও বরিশাল বেল্ট মেইনটেইন করেন। তিনি রাজীব আহসানেরও অনুসারী।
তুলনামূলক জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি হলে সভাপতি হিসেবে জবি ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম রফিকের (সেশন : ২০০১-০২) সম্ভাবনা উজ্জ্বল। রফিক বরিশাল বেল্ট মেইনটেইন করেন। এ ছাড়া তিনি হামিদ সিন্ডিকেটেরও অনুসারী।
আংশিক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে রয়েছেন দুইজন। জবি ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক কাওসার (সেশন : ২০০৩-’০৪) ও আসিফ রহমান বিপ্লব (সেশন : ২০০১-’০২)। কাওসার, এ্যানী-দোলন-আজিজ সিন্ডিকেটের অনুসারী। তবে কাওসারের পরিবারের বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বিপ্লব জুয়েল-পারভেজ সিন্ডিকেট মেইনটেইন করেন। তিনি ছাত্রদল সহ-সভাপতি তারেকুজ্জামান তারেকেরও অনুসারী। এ ছাড়া তিনি ডা. দোলনকেও মেইনটেইন করেন।
জবিতে আহ্বায়ক কমিটি হলে সেখানে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আরও আলোচনায় রয়েছেন : জগন্নাথ কলেজের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন মিঠু (সেশন : ১৯৯৯-২০০০), জবি ছাত্রদল নেতা রঞ্জু (২০০০-’০১), রফিক (২০০১-০২), বিপ্লব (২০০১-’০২), কাজী বেলাল হোসেন রাকেশ (২০০১-’০২), নোমান (২০০১-০২), জনি (২০০১-০২), ওমর ফারুক কাওসার (২০০৩-’০৪), মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ওরফে মোটা মিলন (২০০৩-’০৪), মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাফিজ (২০০৪-০৫), সাখাওয়াৎ হোসেন খান (২০০৪-০৫), আব্দুল মান্নান (২০০৫-০৬), সাদিক (২০০৫-০৬), মিজানুর রহমান শরিফ (২০০৫-০৬), আবুল খায়ের ফরাজি (২০০৫-০৬) এবং জাকির হোসেন খান উজ্জ্বল (সেশন : ২০০৫-০৬)।
এদের মধ্যে মিঠু ও রঞ্জু ছাড়া বাকিরা পূর্ণাঙ্গ (আংশিক) কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী।
এ্যানী জবিতে পূর্ণাঙ্গ (আংশিক) কমিটি, আর টুকু আহ্বায়ক কমিটি চান। এ্যানী সিন্ডিকেট কাওসারকে জবির শীর্ষপদে আনতে চায়। অন্যদিকে, মহসিন অথবা রফিককে শীর্ষপদে আনতে আমান-হামিদ সিন্ডিকেট তৎপর। জুয়েল-পারভেজ সিন্ডিকেট বিপ্লবকে জবির শীর্ষপদে আনতে চায়। এ ছাড়া মামুনকে জবির শীর্ষপদে আনতে তৎপর রয়েছেন টুকু-রাজীব।
জবির কমিটি প্রসঙ্গে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন বাংলামেইলকে বলেন, ‘ছাত্রদলকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে শিগগিরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
সিন্ডিকেটের তৎপরতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘জবিসহ ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব নেই।’
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিগত দু’টি আন্দোলনসহ রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী এবং সংগঠনের প্রতি অনুগত, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মেধাবীদের সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হবে।’
জবি কমিটি গঠন নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমরা অবগত নই। কেউ বা কোনো মহল এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে।’
জবি ছাত্রদলের কমিটি ও সিন্ডিকেটের তৎপরতার বিষয়ে জানতে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।