ঢাকা : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সঙ্গে আজ (বুধবার) বেলা ১১টার দিকে দেখা করবেন চার আইনজীবী।
আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
তারা সাঈদীর সঙ্গে দেখা করে রিভিউ প্রসঙ্গে দিকনির্দেশনা নেবেন। বিষয়টি জানয়েছেন সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী।
তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টা বা ১২টার দিকে ওই চার আইনজীবী কেন্দ্রীয় কারাগারে বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। কীভাবে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় থেকে খালাস পাওয়া যাবে সে বিষয়ে রিভিউ আবেদন করবেন। কোন কোন পয়েন্টে বা যুক্তিতে রিভিউ করা যাবে সে বিষয়গুলো নিয়েই মূলত বাবার সঙ্গে আইনজীবীরা দেখা করবেন।’
মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘ইতোমধ্যে রিভিউ প্রসঙ্গে আমাদের প্যানেল ল’ইয়াররা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন, সে বিষয়গুলো বাবার সঙ্গে শেয়ার করবেন। বাবার কোনো পরামর্শ বা গাইড লাইন থাকলে আইনজীবীদের বলবেন।’
তবে সাঈদীর সঙ্গে দেখা করে আজই রিভিউ আবেদন করা হবে কি না সে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেননি মাসুদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের পরিবর্তে সর্বোচ্চ (ফাঁসি) সাজা চেয়ে রিভিউ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর মামলায় সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রিভিউ আবেদন করে।
মানবতারিবোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করে। সে রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষ উভয়ই পাল্টাপাল্টি আপিল করে। আপিলে সাঈদী খালাস চাইলেও রাষ্ট্রপক্ষ চায় ফাঁসি। শুনানি শেষে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা কোনো আবেদন গ্রহণ করেনি আদালত।
আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। অর্থাৎ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সাঈদী কারাগারে থাকবেন। আদালত সাঈদীর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করে দীর্ঘ ১৫ মাস পর। রায় প্রকাশের পর এ মামলার পক্ষসমূহের রিভিউ আবেদন করার পথ তৈরি হয়।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ রায়ের পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) করে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখতে রিভিউ আবেদন করেন। নিয়মানুযায়ী এ মামলার রায় আপিল বিভাগের যে বেঞ্চে ঘোষণা করা হয়েছে তারাই রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি করবেন। তবে সাঈদীর আপিলের রায় ঘোষণাকারী ৫ বিচারপতির মধ্যে ইতোমধ্যে ২ জন বিচারপতি অবসরে গেছেন। রিভিউতে মূল ৩০ পৃষ্ঠার আবেদনের সঙ্গে মোট ৬শ’ ৫৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দেয়া হয়েছে। যাতে পাঁচটি যুক্তি বা গ্রাউন্ড রয়েছে।
রিভিউ প্রসঙ্গে মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘কাদের মোল্লা সাহেবের রিভিউয়ের রায়ে বলা আছে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় অভিযুক্ত ব্যক্তি পড়ার পর রিভিউ করতে ১৫ দিন সময় পাবেন। গত ৬ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগারে বাবা রায়ের কপি পড়ে দেখেছেন, কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ সেটি বাবাকে পড়ে শুনিয়েছেন। সে হিসেবে রিভিউ আবেদন করতে আমরা আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাব।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাঈদীর মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘বাবা কারাগারে অনেক ভালো আছেন, তবে ৭৭ বছর বয়স হওয়ায় তিনি মাঝে মধ্যে অসুস্থ বোধ করেন।’ গত ৬ জানুয়ারি সাঈদী পরিবারের সদস্যরা সাঈদীর সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানান মাসুদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার শুর হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এর পর সাঈদী আপিল করলে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যে রায় দেয়, তাতে সাঈদীর সাজা কমে আমৃত্যু সাজাভোগের রায় আসে। সে সময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই জামায়াত নেতার ছেলে মাসুদ সাঈদী ও আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেছিলেন, তারাও রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে পুনঃবিবেচনার আবেদন করে খালাস চাইবেন।
সাঈদীর আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘আমৃত্যু’ কারাদণ্ড দেয়া হয়। আমৃত্যু কারাদণ্ড বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত কারাবাস বোঝাবে। এ ছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের রায় দেয় আপিল বিভাগ।
এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসা বালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল। আপিল বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার যে পাঁচটি রায় এসেছে, তার মধ্যে কেবল সাঈদীর ক্ষেত্রেই রিভিউ বাকি রয়েছে।