ঢাকা : স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে বাংলাদেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক’টি অচল হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করছেন না।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকাল থেকে পূর্বঘোষিত এই লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা এতদিন অহিংস আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবি মেনে না নেয়ায় আমাদের লাগাতার কর্মবিরতি দিতে হয়েছে। এর মধ্যেও কোর্স ফাইনাল ও সেমিস্টার পরীক্ষা চলছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সর্বাত্মক কর্মসূচি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল মনছুর বাংলামেইলকে বলেন, ‘শিক্ষকরা সকাল থেকেই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে, যা দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত চলবে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আলোচনাসভাসহ প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।’
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মবিরতি চলছে। তবে প্রথম বর্ষে চলমান ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কার্যক্রম কর্মবিরতির আওতামুক্ত রেখেছেন শিক্ষক সমিতি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সান্ধ্যকালীন কোর্সসমূহের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও পূর্ণ কর্মবিরতি চলছে। সকাল ১০টা থেকে শিক্ষকরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘ফেডারেশন কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে লাগাতার এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।’
গত ২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে দীর্ঘ বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।
গত বছরের মাঝামাঝিতে অষ্টম বেতন কাঠামো প্রস্তাবের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নানা কর্মসূচিতে নিজেদের ‘মর্যাদাহানি ও সুবিধা কমে যাওয়া’র আপত্তি তুলে আসছে।
গত মাসে বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু এখনও দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। শিক্ষকরা বলছেন, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত পূর্ণ কর্মবিরতি চলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব হোসাইন বাংলামেইলকে বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। না হলে আমরা সেশনজটে পড়ব। আর এর দায়ভার সরকার ও শিক্ষকদেরই নিতে হবে।’
শিক্ষকদের এ আন্দোলনে মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষাকার্যক্রম। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সরকার ও শিক্ষকদের মধ্যে দ্রুত সমঝোতা হওয়া উচিত। না হলে তাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়বে।
চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বাংলামেইলকে বলেন, ‘সরকার চাইলে এটি সমাধান করতে পারত। কিন্তু সমাধান না করে সরকার উল্টো শিক্ষকদের ক্ষেপাচ্ছেন। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলন কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়বে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, তাদের দাবি মেনে নিলে আগামীকাল থেকেই তারা এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন।