দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনায় শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত।
রোববার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১১ ৮ মিনিটে শুরু হওয়া আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করছেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরুব্বি ভারতের মাওলানা সা’দ।
আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে হাত তুলেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করছেন তারা।
এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে তুরাগ তীর মুখরিত করে দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আকুতি জানাচ্ছেন লাখ লাখ মুসল্লি।
এদিকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা।
আর রোববার ভোরে কুয়াশ-শীত উপেক্ষা করে কোনো যানবাহন না পেয়ে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে পায়ে হেঁটেই ইজতেমা স্থলে রওনা দেন লাখো মুসল্লি।
যেন সব পথ গিয়ে থেমেছে তুরাগ তীরে। তবে সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকার সড়ক-মহাসড়ক, অলি-গলি ও খালি জায়গায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো ইজতেমা এলাকা।
ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে অনেক মুসল্লি আখেরি মোনাজাতের জন্য খবরের কাগজ, পাটি, বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে কামাড়পাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং অলি-গলিসহ বিভিন্নস্থানে অবস্থান নেন। নানা বয়সী বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি নারীদেরও মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়।
এমনকি বাসা-বাড়ি ও কারখানার ছাদ, নৌকা, বাসের ছাদ, ফুটওভার ব্রিজ-যে যেখানে পারছেন সেখানে বসেই দু’হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নিচ্ছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে বাংলাদেশে আয়োজিত ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফায় আখেরি মোনাজাতে কয়েক লাখ মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন।
পাশাপাশি বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ৮ হাজার বিদেশি মেহমান অংশ নিয়েছেন এবারের ইজতেমায়।
এদিকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে বিশ্ব ইজতেমায় ধর্মপ্রাণ মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে যানবাহন পার্কিংয়ের জন্যও স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এছাড়া প্রথম দফায় আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশ-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না হলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না।
বিশেষ বাস-ট্রেন:
এদিকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
এদিকে ইজতেমা শেষে ঘরমুখী মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিশেষ বাসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিদেশি মেহমানসহ ৮ মুসল্লির মৃত্যু:
মুসলিম উম্মাহের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে আসা এক বিদেশিসহ ৮ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
তারা সবাই বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন বলে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন।
এবার জমেনি বিয়ের আসর:
দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে বিশ্ব ইজতেমাকে ৩২ জেলায় নামিয়ে আনা হয়েছে। খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার বিশ্ব ইজতেমায় এবার ভাঙা হলো আরেক রীতি। প্রতিবছর ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হলেও এবার সে আসর বসেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইজতেমায় বিয়ের আয়োজন করা হলে শুধু তাবলিগের মুসল্লিরা জানতে পারেন। বর-কনের পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতে পারেন না। এতে পরিবারে বিয়ের আনন্দটা কমে যায়। তাই এবার ইজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হয়নি।
০৮ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হচ্ছে রোববার (১০ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে।
মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ৩২ জেলা নিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি। আর ১৭ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।