এবার কাঠগড়ায় বিএনপি নেতারা

Slider রাজনীতি

51f0daf5eb97e-bnp_logo

 

 

 

 

 

 

পৌরসভা নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ও ‘দুর্বল’ মেয়র প্রার্থী মনোনয়নে যেসব কেন্দ্রীয় এবং জেলার শীর্ষ নেতা সুপারিশ করেছেন তাদের ‘চিহ্নিত’ করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের পরাজয়ের নেপথ্য কারণসহ সার্বিক চিত্র অনুসন্ধানে বিভাগীয় মনিটরিং কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটি। আগামী পক্ষকালের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়ে গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্ট নেতাদের চিঠি পাঠান কমিটির আহ্বায়ক ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

অবশ্য দলীয় সূত্র জানায়, মহাসচিবের চিঠি দেওয়ার আগে এ সম্পর্কে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মৌখিক নির্দেশ পেয়ে পৌরসভার তথ্য সংগ্রহে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে বিভাগীয় কমিটিগুলো। গত বুধবার কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির বৈঠকে কিছু পৌরসভা নির্বাচনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছেন তারা।

সূত্র জানায়, পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক চিত্র পেতে চায় বিএনপি। এ জন্যই মহাসচিবের এই চিঠি। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর নির্বাচনে দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের কাছে এ চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপির চিত্রসহ প্রার্থীদের এজেন্ট ও স্থানীয় দলীয় নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রতিবেদন হাতে পেয়ে দলের বৃহত্তর স্বার্থে ‘যোগ্য’ ও ‘ত্যাগী’ নেতাদের বাদ দিয়ে ‘অযোগ্য’ ও ‘জনবিচ্ছিন্ন’ ব্যক্তিকে মনোনয়নে ব্যক্তিস্বার্থে সুপারিশকারী নেতাদের তলব করবেন খালেদা জিয়া। ‘ভুল’ প্রার্থী দেওয়ার জন্য দায়ী নেতাদের ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বিএনপিপ্রধান। যারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তাদেরও যথাযথ মূল্যায়ন করবেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা তারা অবহিত হয়েছেন। তার পরও দলীয়ভাবে প্রকৃত ঘটনা জানতে প্রতিটি পৌরসভার সরেজমিন চিত্র সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। কোথায়, কী ঘটনা ঘটেছে এবং ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট কারা ছিল তাদের নামও সংগ্রহ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর দলের হাইকমান্ড সার্বিক বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।
সদ্যসমাপ্ত ২৩৪ পৌর নির্বাচনে বিএনপির মাত্র ২৪ জন মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ১৮০ মেয়র প্রার্থী। এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ছয়টি পৌরসভায় বিএনপি হেরে যায়। পৌরসভাগুলো হলো- জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, পাবনার চাটমোহর, যশোরের বাঘারপাড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ।

দলীয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে বিএনপি হাইকমান্ড জানতে পেরেছেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া মেয়র প্রার্থীরা হয় বিজয়ী হয়েছেন অথবা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হয়েছেন। তাদের পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের একক পছন্দে দেওয়া প্রার্থীদের বেশিরভাগ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনী মাঠে তাদের পক্ষে নামেননি স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

সূত্র জানায়, কমিটির নেতারা সারাদেশে পৌরসভা নির্বাচনে পরাজয়ের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন আকারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করবেন। ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ‘অযোগ্য’ প্রার্থীকে মনোনয়নে সুপারিশকারী নেতাদের তলব করে কৈফিয়ত চাইবেন খালেদা জিয়া।

সূত্র জানায়, কোনো প্রার্থীকে ব্যক্তিস্বার্থে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশকারীদের তিরস্কার করবেন বিএনপিপ্রধান। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ব্যক্তিস্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া নেতাদের ব্যাপারে ‘মূল্যায়ন’ করা হবে।
বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা সমকালকে জানান, অযোগ্য প্রার্থী মনোনয়নে সুপারিশকারীদের পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার দলের মনোনয়ন দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপির কোন কোন নেতা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন এবং কোন কোন নেতা কাজ করেননি তারও তালিকা সংগ্রহ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *