মন্ত্রী-এমপিরা সংখ্যালঘুর জমি দখল করছে

Slider জাতীয়

2015_12_01_21_18_19_oxiJBPDUdyyxCNuWYwbzKEloQ1qCHG_original

 

 

 

 

ঢাকা : মন্ত্রী-এমপিরা সংখ্যালঘুদের জমি দখলের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ ক্ষমতাবানরা বিভিন্নভাবে দুর্বল সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করছে। সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’

বেশিরভাগ জায়গায় জমি দখলের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে বলেও জানান তিনি।

সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম ও তার সমর্থকদের দ্বারা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল এবং হামলার বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আসক, এলএলআরডি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ ৮টি সংগঠন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্য দবিরের জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফরিদপুরের ঘটনায় মন্ত্রীর জড়িত থাকার কথা উঠেছে।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও-ফরিদপুর ছাড়া গত কয়েকদিন আগেই দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একজন মন্ত্রীর দ্বারা জমি দখল ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

সাংবাদিকরা ওই মন্ত্রীর নাম জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম উল্লেখ করেন তিনি।

এ সময় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা ভুক্তভোগী জিতেন চন্দ্র সিং সাংসদ দবিরের ছেলে মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে তার ছোট ভাই ভাকারাম সিংয়ের উপর হামলার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, ‘তারা জমি দখল করতে এসেছিল। এক পর্যায়ে তারা ভাকারামকে পায়ে-পিঠে চাপাতি দিয়ে কোপায়। তাকে ঘিরে ধরে কীভাবে হামলা চালানো হয়েছিল তা বুঝাতে পারব না।’

ওই হামলার পর তার ছেলে অভিলাল সিং এখন দিল্লি গিয়ে বসবাস করছে বলে জানান জিতেন চন্দ্র সিং।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কাকার ওপর হামলার পর ছেলে বলছিল, বাবা আর দেশে থাকব না, চলো ভারত চলে যাই। পরে সে নিজেই চলে গেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জিতেনের কথা প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, ‘সবলের অত্যাচারের কারণে দুর্বল ভাবছেন তারা দেশে থাকবেন না। এটা তো আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হামলা যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আশা দেখানো সরকারের সময়ে এটা কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়।’ সংখ্যালঘুদের জমি দখলের যে অবস্থা সারাদেশে চলছে তার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর ঘটনায় তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

জমি দখলকে কেন্দ্র করে গত ১৯ জুন সাংসদের ছেলের নেতৃত্বে অন্তত ৩০জন অস্ত্রধারী সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা করে বলে জানান তিনি।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের হামলায় অকুলচন্দ্র তার পরিবার নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। আর সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছেন ভাকারাম সিংসহ ৮-১০ জন। সন্ত্রাসীরা কয়েকজন নারীকেও মারধর করে।’

জমি দখল, সহিংস হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা একাধিকবার ঘটলেও পুলিশ ও স্থানীয় কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তথ্যানুসন্ধান দলের এই সদস্য।

জমিদখল নিয়ে বিরোধের কারণ ব্যাখ্যা করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ দবিরুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নে রনবাগ ইসলাম টি এস্টেট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি চা-বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনদিক দিয়ে ভারতীয় সীমানাবেষ্টিত দক্ষিণ পাড়িয়া মৌজার পশ্চিমাংশে এই চা বাগানের বেশিরভাগ অংশ পড়েছে।’

সাংসদ দবিরুলের ছেলে মাজহারুল ইসলাম সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে তাদের জমি সাংসদের কাছে বিক্রি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ ভুক্তভোগীরা করেছেন জানিয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সাংসদের লোকজনের বাধার কারণে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের প্রয়াত নেতা হেলকেতু সিংয়ের ছেলে বধুরাম সিং তার ৯৩ নম্বর দাগে অবস্থিত ২৭ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করতে পারেন না। একই মৌজায় ২ নম্বর দাগের অধিকাংশ খাসজমি দখল করে রেখেছে সাংসদের পরিবার। ৪ নম্বর দাগে নাগর নদীতীরে শ্মশানে যাওয়ার রাস্তার খাসজমি দখল করে চা বাগান করার চেষ্টাও করেছে সাংসদের লোকজন।’

সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলার পাঁচ মাস পর গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গীতে যায় ওই তথ্যানুসন্ধান দল।

এই দলে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও সুব্রত চৌধুরীর সঙ্গে আরও ছিলেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন, এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ব্লাস্ট-এর অনারারী নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন এবং দিনাজপুরের সিডিএ নামক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শাহ ই মবিন জিন্নাহ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ভুক্তভোগী অকুল চন্দ্র সিং ও ভাকারাম সিং বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *